নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের নিয়োগ করা দুই মধ্যস্থতাকারী রাজধানীর শাহিনবাগের বিক্ষোভস্থলে গেলেন। আজ কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। তাঁরা সেখানে গিয়েছেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে প্রতিবাদ-অবস্থান অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলার জন্য। এঁরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে, সাধনা রামচন্দ্রন। তাঁদের সাহায্য করবেন প্রাক্তন তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হবিবুল্লাহ। হেগড়ে আজ সেখানে বলেন, আমরা এসেছি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আশা করছি প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলতে পারব। সবার সহযোগিতায় বিষয়টি মিটিয়ে ফেলারও আশা করছি।
সাধনা রামচন্দ্রন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আপনাদের প্রতিবাদের অধিকার স্বীকার করেছে। আমরা প্রত্যেকের কথা শুনব। তিনি আরও বলেন, আপনাদের প্রতিবাদের অধিকার আছে, এটা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সিএএ-কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো অন্যদেরও তো অধিকার আছে তারা যেন রাস্তা দিয়ে চলতে পারেন, দোকানপাট খুলতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় পড়ে শুনিয়ে রামচন্দ্রন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট মানুষের প্রতিবাদের অধিকার মেনে নিয়েছে। তবে এই আন্দোলন অবরোধে পরিণত হয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা, হয়রানি হচ্ছে। আপনাদের যেমন প্রতিবাদের অধিকার আছে, তেমনই আরও লোকজনেরও বাধাহীন স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার আছে। আমরা যেমন দেশ, সেখানে প্রত্যেকের অধিকারকে সম্মান করতে হয়। আমাদের একসঙ্গে বসে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে গোটা বিশ্বের সামনে উদাহরণ হওয়া উচিত।
সূত্রের খবর, তাঁদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অবস্থানকারীরা।
শাহিনবাগে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা আটকে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে বলে জনস্বার্থমূলক পিটিশন পেশ হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। পিটিশনারের বক্তব্য ছিল, প্রতিবাদস্থলে জোর করে বসে আছ অবস্থানকারীরা। এটা বেআইনি। দিল্লি ও নয়ডার সংযোগরক্ষাকারী জনসাধারণের ব্যবহারের রাস্তা আটকে থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন বহু মানুষ।
দুমাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা শাহিনবাগের বিক্ষোভ অবস্থানের দাবি, কেন্দ্রকে সিএএ বাতিল করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সোমবার অবস্থান তুলে দেওয়ার দাবিতে পেশ হওয়া পিটিশনের শুনানি করে প্রশ্ন তুলেছিল, রাস্তা আটকে দিনের পর দিন অবস্থান চলতে কি। বলেছিল, আন্দোলনের অধিকার অবশ্যই আছে, কিন্তু তারও সীমা, পরিধি আছে। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত তিনজনকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগ করে অবস্থানকারীদের সঙ্গে কথা বলে অন্যত্র উঠে গিয়ে অবস্থানে বসার জন্য বোঝানোর দায়িত্ব দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট ২৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
বিচারপতি এস কে কউল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চ সেদিন বলেছিল, একদলকে নিজেদের ক্ষোভ, অসন্তোষ জানাতে রাস্তায় বসে পড়তে দেখে আরেকদল উদ্ধুদ্ধ হতে পারে, যার জেরে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। গণতন্ত্র মতপ্রকাশের ভাষা বটে, তবে তারও সীমারেখা আছে।


প্রতিবাদীরা অবশ্য রিট পিটিশনের বক্তব্য উড়িয়ে অবস্থানের জেরে মানুষের হয়রানির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, অবস্থানের ফলে মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা ভিত্তিহীন।