ইম্ফল : দুই ছাত্র-ছাত্রীর "অপহরণ ও হত্যার" ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত মণিপুর (Manipur)। সাম্প্রদায়িক হিংসা (Ethnic Violence) ছড়িয়ে পড়লে গত ৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল এই দুই জন। সশস্ত্র আততায়ীরা তাদের হত্যা করেছে বলে সন্দেহ পরিবারের। মাস দু'য়েক আগে এই দুই ছাত্র-ছাত্রী নিখোঁজ হলেও, সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) তাদের মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তপ্ত উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। 


এই দুই জনের হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইম্ফল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হয় রাজ্যজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির যাতে আর অবনতি না হয়, সেই লক্ষ্যে ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম জেলায় পূর্ণাঙ্গ কার্ফু জারি করল মণিপুর সরকার। 


১৭ বছরের ছাত্রী হিজাম লিন্থোগাম্বি ও বছর ২০-র ছাত্র ফিজাম হেমজিৎ। মণিপুরে গোষ্ঠী হিংসা চলাকালীন গত ৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল এই দুই ছাত্র-ছাত্রী। সোমবার তাদের মৃতদেহের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তার পর আর ঠেকানো যায়নি ছাত্র-বিক্ষোভ। গত দুই দিন ধরে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ইম্ফল-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তপক্ষে ১০০ ছাত্র-ছাত্রী জখম হন। মুখ্যমন্ত্রী বাসভবনের দিকে তাঁরা মিছিল করে যাচ্ছিলেন। নিরাপত্তাবাহিনী তাঁদের আটকালে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তাঁদের ঠেকাতে বাহিনী টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায় ও স্মোক বোমার ব্যবহার করে। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য  হিংসা রুখতে ইম্ফলজুড়ে মোতায়েন করা হয়- মণিপুর পুলিশ, সিআরপিএফ ও ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স।


ঘটনার বীভৎসতা আঁচ করে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় মণিপুর সরকার। এর পাশাপাশি আততায়ীদের ধরতে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। এদিকে দায়িত্ব পেয়ে আজই ইম্ফল পৌঁছে যায় বিশেষ অধিকর্তা অজয় ভাটনগর-সহ সিবিআইয়ের একটি দল। এর আগে X হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং লিখেছিলেন, 'দুই নিখোঁজ ছাত্র-ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরের পরিপ্রেক্ষিতে, রাজ্যের মানুষকে আমি এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, রাজ্যে ও কেন্দ্র উভয় সরকারই আততায়ীদের ধরতে একযোগে কাজ করছে।' তাঁর সংযোজন, 'আমি ক্রমাগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি যাতে আততায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যায়।'  


পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার নতুন করে ইন্টারনেট পরিষেবা নিষেধ করা হয়। ১ অক্টোবর সন্ধে ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই নির্দেশিকা লাগু থাকবে। 


এদিকে আরও ছয় মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে বিতর্কিত AFSPA-র। এর আওতায় অবশ্য থাকছে না ইম্ফল উপত্যকার ১৯টি থানা এলাকা। রাজ্য পুলিশের অনুমতি ছাড়া এই ১৯টি থানা এলাকায় কাজ করতে পারবে না সেনা ও অসম রাইফেলস। এই থানা এলাকাগুলির প্রতিবেশী রাজ্য অসমের সীমান্তঘেঁষা।