নয়াদিল্লি: ভূরি ভূরি অভিযোগ দায়ের হলেও, পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠে আসছে লাগাতার। সেই আবহেই মণিপুর থেকে আরও এক নৃশংস ঘটনা সামনে এল (Manipur Horror)। সেখানে ১৮ বছরের এক তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মেইতেই সম্প্রদায়ের এক মহিলা সংগঠনই পাষণ্ডদের হাতে তাঁকে তুলে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা খোদ (Manipur Violence)। 


গত ১৫ মে ওই তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। গত ২১ জুলাই সেই নিয়ে থানায় যাওয়ার সাহস কুলিয়ে ওঠেন ওই তরুণী। জিরো এফআইআর দায়ের করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ দায়েরই সার, এখনও পর্যন্ত তদন্ত একচুলও এগোয়নি, কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ নির্যাতিতার।


এফআইআর-এ নির্যাতিতা জানিয়েছেন, মেইতেই মহিলাদের সংগঠন 'মিরা পাইবিস', যা কিনা 'মাদার্স অফ মণিপুর' নামেও পরিচিত, ওই সংগঠনই কালো পোশাক পরিহিত, সশস্ত্র পুরুষের হাতে তুলে দেয় তাঁকে। গণধর্ষণ এবং পাশবিক অত্যাচারে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি যে, পড়শি রাজ্য নাগাল্যান্ডের একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। শুক্রবার শেষ মেশ কাংপোকপি থানায় জিরো এফআইআর দায়ের করতে সক্ষম হন।


নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী যে জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তাতে শারীরিক নির্যাতন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, গণধর্ষণ এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংস আচরণের মামলা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকদের 'অজ্ঞাত পরিচয়' বলে উল্লেখ করা রয়েছে জিরো এফআইআর-এ। তবে মেইতেই মহিলা সংগঠনের উল্লেখ রয়েছে। কাংপোকপি থানা থেকে জিরো এফআইআর-টি ইতিমধ্যেই ইম্ফল ইস্ট থানায় স্থানান্তরিত হয়েছে। 


আরও পড়ুন: Manipur Violence: কালামের থেকে সম্মান পেয়েছিলেন স্বামী, মণিপুরে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা


নির্যাতিতা জানিয়েছেন, গত ১৫ মে বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁদের অপহরণ করে চারজনের একটি সশস্ত্র দল। বেগুনি রংয়ের একটি গাড়িতে তুলে প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। এর পর মেইতেই মহিলা সংগঠনের সদস্যদের ডাকা হয়। সকলে মিলে এলোপাথাড়ি চড়, থাপ্পড়, ঘুষি মারতে থাকেন। এর পর মেইতেই মহিলা সংগঠনের এক মহিলা আরও কয়েক জনকে ডাকার কথা বলেন। তাতে কালো পোশাকের চার পুরুষ এসে হাজির হন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। 


এফআইআর-এ নির্যাতিতা জানিয়েছেন, চার জনের মধ্যে দু'জনের বয়স মধ্য তিরিশ। বাকি দু'জনের বয়স ৫০-এর উপরই। ওই তরুণীর অভিযোগ, মেইতেই মহিলা সংগঠনের একজন তাঁকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। তার পর তাঁকে জোর করে অন্য একটি গাড়িতে তোলা হয়। ওই চার পুরুষও তাতে উঠে পড়েন, ছুটতে থাকে গাড়ি। গাড়ির মধ্যেও চলতে থাকে অত্যাচার। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মারা হয় তাঁকে। তার পর পাহাড়ের উপর পৌঁছয় গাড়ি। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চার জনের মধ্যে বচসা বধে। প্রাণে মেরে ফেললে থানা-পুলিশ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।


সেই সময় সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তির পায়ে লুটিয়ে পড়েন ওই তরুণী। প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু আবারও গাড়িতে তুলে বেরিয়ে পড়েন সকলে। কিছুটা তফাতে নিয়ে গিয়ে আবারও চলে অত্যাচার। লাথি, চড়, ঘুষি, যৌন নিগ্রহ, বাদ যায়নি কিছুই। নির্যাতিতার দাবি, তাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেরেন ওই তরুণী। জ্ঞান ফিরলে আবারও মারধর শুরু হয়। এর পর চার জনের মধ্যে তিন জন দফায় দফায় ধর্ষণ করেন তাঁকে। এত অত্যাচার চালানো হয় যে কান, মুখ, মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। তার পরেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে বচসা চলছিল অভিযুক্তদের মধ্যে। এর পর চার জনের মধ্যে এক জন গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারেন ওই তরুণীকে। তাতে ঢাল বেয়ে নীচের রাস্তায় পড়ে যান তিনি। একজন অটোরিকশা চালক তাঁকে উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর থানায় নিয়ে যান। কারও নজরে যাতে না পড়েন, তর জন্য নির্যাতিতার উপর শাক-সবজির বস্তা চাপিয়ে দেন ওই ব্যক্তি।


ওই তরুণী জানিয়েছেন, থানায় পৌঁছে দেখা যায়, যে পুলিশকর্মীরা বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন, তাঁরা মেইতেই সম্প্রদায়ের। তাতে ওই রিকশা চালকের সামনে ভেঙে পড়েন তিনি। পুলিশের উপর ভরসা না করে, ওই রিকশা চালককে সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যেতে আর্জি জানান। এর পর ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ইম্ফল ছাড়েন এবং সাপোরমিনা পৌঁছন। কাংপোকপি গেলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক দেখে সেখানকার হাসপাতাল থেকে নির্যাতিতাকে কোহিমা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  


বিগত দু'মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। সংরক্ষণের প্রশ্নে সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতেই বনাম জনজাতি কুকিদের মধ্যেকার বিবাদ হিংসাত্মক আকার ধারণ করেছে। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরাল উঠছে। জনজাতি মহিলাদের বিরুদ্ধে একের পর এক নারকীয় অপরাধের ঘটনা সামনে আসছে, যাতে নয়া সংযোজন ১৮ বছরের তরুণীর গণধর্ষণ। একটু সুস্থ হলে থানায় অভিযোগ জানান। কিন্তু সেই অভিযোগ আদৌ খতিয়ে দেখা হচ্ছে কিনা, কোনও তথ্যই নির্যাতিতাকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।