ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ( Cyclone Midhili ) নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমছিলই বাংলাদেশে। কারণ শুরু থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি দেখে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, ঝড়টি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে যাবে। শনিবার ল্যান্ডফলের কথা থাকলেও,  শুক্রবার দুপুর তিনটে নাগাদ বাংলাদেশের ভূভাগে প্রবেশ করে। এরপর  ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ত্রিপুরার দিকে এগিয়ে যায়। জলভাগ থেকে স্থলে প্রবেশ করতেই ধীরে ধীরে শক্তি হারায় ঝড়টি। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী বর্তমানে তা গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে ত্রিপুরার ওপরে। এরপর তা এগিয়ে যাবে উত্তরপূর্ব দিকে।

পূর্বাভাসের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বলভাবেই মিধিলি বাংলাদেশের ( Bangladesh Midhili ) উপকূলে আঘাত হানে। তবে এর ফলে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে খবর। এছাড়া তছনছ হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। শীতের শুরুতেই দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি সহ মিধিলি প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এর ফলে ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ভূমিধসের পরে অনেক এলাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। 


সূত্রের খবর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দমকা হাওয়ায় রেললাইনে গাছ পড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টার জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। শুক্রবার ভোররাতে কক্সবাজার জেলায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন আনোয়ারা বেগম (৫০), তার ছেলে শহিদুল মোস্তফা (২০) ও মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১)। চট্টগ্রামেও পড়েছে ঝড়ের প্রভাব। আব্দুল ওহাব নামে ৭২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বিকেলে গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে একই ধরনের ঘটনায় সিদরাতুল মুনতাহা আর্য নামে চার বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইলের বাসাইলে গাছের ডাল পড়ে আব্দুর রাজ্জাক (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।


মিধিলি আসার আগে থেকেই ঝড়ের বিপদ সম্পর্কে বাসিন্দাদের সতর্ক করার জন্য উপকূলীয় জেলাগুলিতে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সতর্কতা প্রচার চালায় প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে ঝড়ের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতর মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিলেও ঝড়ের আগে ৩০০ জনের বেশি জেলে ২০টি ট্রলার নিয়ে সাগরে চলে গেছে বলে খবর। রাত পর্যন্ত তারা ফেরেনি বলেই খবর। ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছ উপড়ে বরিশাল শহরের অর্ধেক বিদ্যুৎ সংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। ঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে শহরের অনেক এলাকাই জলমগ্ন। পটুয়াখালিতে ঝড়ে ১৩০টির বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। চলতি মরশুমে এই জেলার কৃষকরা ১৯১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। এখানেও ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়।