কলকাতা: আগামীকে সুরক্ষিত করতে গেলে, দেশের শিড়দাঁড়া শক্ত করতে গেলে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন, মোদি সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদনই রাখলেন শহরের তিন স্বনামধন্য চিকিৎসক। বললেন, বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরিষেবা যেমনই হোক না কেন, দেশের সব মানুষকে ভালভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিতে সরকারি চিকিৎসাতেই প্রথম নজর দিতে হবে।

দীপ্তেন্দ্র সরকার, চিকিৎসক
বিশ্বজুড়ে অতিমারি পরিস্থিতিতে নগ্নভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার ভাঙাচোরা দিকটি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। এবার মানবজাতির স্বার্থেই স্বাস্থ্য পরিষেবার শিরদাঁড়া শক্ত করা দরকার। চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণায় ও পরিষেবার উন্নতিতে সরকারকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বাড়াতে হবে বরাদ্দ। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, মনে রাখতে হবে দেশের সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষের ভরসা কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাই। তাই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, তার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সর্বোপরি বলতে হবে, চিকিৎসা পরিষেবার বীমাকরণ নয়, প্রতিটি নাগরিক যাতে চিকিৎসা পায়, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে (To conclude it is not about insuring healthcare for everybody but ensuring healthcare to every citizen)

কুণাল সরকার, চিকিৎসক
আমরা অর্থনৈতিক ভাবে টালমাটাল অবস্থাতেই ছিলাম। তার মধ্যে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াল কোভিড-১৯ ও পূর্বভারতে উমপুনের প্রভাব। জোড়া ধাক্কায় কার্যত নৌকা টলোমলো। এটা জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দেশের কোনায় কোনায়, তাতে স্বাস্থ্যপরিষেবার পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি উন্নত হতে হয়। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল একটি খাটিয়ার উপর ৫০ জন বসার মতো। কিন্তু সেই খাটিয়ার ফাঁকগুলো পূরণের চেষ্টা হয়নি।
বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা যতই উন্নত হোক, সাধারণের নাগালে চিকিৎসা পৌঁছে দিতে জোর দিতে হবে জনস্বাস্থ্যেই। সরকারের হাতেই থাকুক চিকিৎসা পরিষেবার ৬০ শতাংশ। সমস্যা হল, সরকার যা 'দিয়েছি' বলে দাবি করে, তার ৭০ শতাংশই ফাঁকফোকরে ভরতি।
আমরা অর্থনীতির নিরিখে বিশ্বের ৬ নম্বর দেশ আর আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাই চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। এই ভয়ঙ্কর ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে উঠতে সরকারকে অনেক সচেতন হতে হবে, সত্যি সত্যই সদিচ্ছা থাকতে হবে।
'দেব বলে' সরকার যা প্রতিশ্রুতি দেয় , বাস্তবে তার ছিটেফোঁটা এসে পৌঁছাল, এমনটা হওয়া তো সমীচিন নয়! জনস্বাস্থ্য নিয়ে সরকারকে স্বচ্ছ পদক্ষেপ নিতে হবে। বাঁশের লাঠি দিয়ে কি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হয়?

অপূর্ব ঘোষ, চিকিৎসক
আমরা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অনেকটাই পিছিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাপেক্ষে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ জায়গায় উন্নতির ভীষণই প্রয়োজন। সব শ্রেণির মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে এই ক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দ অনেক বাড়াতে হবে। আমরা অনেক ব্যাঙ্ক জাতিয়াতি হতে দেখি, বড় ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি করতে দেখি, তাতে তো পরোক্ষে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সরকারেরই। সেই হাজার-হাজার কোটি টাকার চুরি ঠেকালে সরকারের হাতে টাকার অভাব হবে না।
প্রথম যখন ইংল্যান্ডে কাজের জন্য যাই, ওরা প্রথম বৈঠকেই বলে, তারা চিকিৎসায় মোট বরাদ্দের ৯০ শতাংশই শিশুস্বাস্থ্যে ব্যয় করে। কারণ তারাই আগামী ৬০-৭০ বছরের ভবিষ্যৎ। বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় করে বয়স্কদের চিকিৎসায়।
সেই কথা মাথায় রেখেই বলি, নিজের দেশের ভবিষ্যৎ পোক্ত করার জন্য শিশুদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন আগে, চুরি ঠেকান।