আশাবুল হোসেন, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সৌরভ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, কলকাতা : দুর্নীতি ঘিরে এখন আবর্তিত হচ্ছে ভারতের রাজনীতি! শাসক বনাম বিরোধী, দু পক্ষের হাতিয়ার দুর্নীতি! মোদির পাল্টা দুর্নীতি ইস্যুকেই এবার হাতিয়ার করল বিরোধীদের জোট I.N.D.I.A । ২৩ জুন, পাটনায় প্রথম বৈঠকে বসেছিল বিরোধী দলগুলি! তার কয়েকদিন পরই বিরোধীদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার দুর্নীতি ইস্যুতে বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন। তাঁর মুখে উঠে এসেছে বাংলার বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ গত জুন মাসেই মোদি বলেছিলেন, ' ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রোজভ্যালি, সারদা, শিক্ষক নিয়োগ, গরুপাচার, কয়লা পাচার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাংলার মানুষ এই দুর্নীতি ভুলবেন না।'
আরও পড়ুন :
'দিদি মোদির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, আর খোকাবাবু আরেকদিকে', অধীরের কটাক্ষ
পরবর্তীতে I.N.D.I.A জোটের উদ্দেশে আক্রমণ শাণিয়ে বলেন, ' লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি। এইজন্যই দেশের মানুষ বলছে, এটা তো কট্টর দুর্নীতিগ্রস্ত সম্মেলন হচ্ছে। কট্টর দুর্নীতিগ্রস্ত সম্মেলন হচ্ছে।'
বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী বিরোধী রাজনৈতিক দলের সেকেন্ড রাউন্ডের বৈঠকের ঠিক আগের মুহূর্তেও, দুর্নীতি ইস্যুতে চাঁছাছোলা ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি।
ইন্ডিয়া জোটের বেঙ্গালুরু বৈঠকের আগে মোদি বলেছিলেন, ' জনতা দেখছে, এই দলগুলি কেন একত্রিত হচ্ছে। জনতা দেখছে, কোন আঠা এদের জুড়ছে। কীভাবে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য় মূল্য় আর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে। কেরলে বাম-কংগ্রেস রক্তের পিপাসু, বেঙ্গালুরুতে দুদলের নেতা হাতে হাত রেখে হাসছে। লোকে দেখছে, বাংলায় বাম-কংগ্রেসের কর্মীদের তৃণমূল হামলা করছে। তাদের নেতা তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলছে না। দেশবাসী বলছে, এটা মিশন নয়, বাধ্য়বাধকতা।'
আর, এবার মুম্বইয়ে তৃতীয় দফায় বিরোধীদের বৈঠকের পর সেই দুর্নীতি ইস্যুতে পাল্টা মোদি সরকারের উদ্দেশে ধারাল আক্রমণ করল I.N.D.I.A জোট । সূত্রের দাবি, শুক্রবারের বৈঠকে রাহুল গাঁধী বলেন, ' নরেন্দ্র মোদির এমন ভাবমূর্তি এমন প্রচার করা হয়, যেন তিনি খুব সৎ। কিন্তু আসলে এমনটা নয়। সত্য়িটা হল, নরেন্দ্র মোদি সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী। মোদি সরকার সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। এই বিষয়টা I.N.D.I.A জোটের প্রচারেও আনতে হবে। '
অরবিন্দ কেজরিওয়াল এদিন বলেন, ' দেশে যে মোদি সরকার রয়েছে, আমার মনে হয় স্বাধীনতার পর এটাই দেশের সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অহঙ্কারি সরকার।'
যে লালুপ্রসাদ যাদব ৫টি পশুখাদ্য় মামলায় আদালতে দোষী সাব্য়স্ত হয়েছেন, বর্তমানে জামিনে বাইরে রয়েছেন, সেই তাঁকে আবার শোনা গেল দুর্নীতি ইস্য়ুতে নিজের সাফাই দিতে! ' কতটা মিথ্যা বলে ওরা সরকারে এসেছিল। বলেছিল নেতাদের টাকা সুইস ব্যাংকে আছে। বলেছিল সেই টাকা ফেরত নিয়ে এসে ১৫ লাখ দেবে৷ আমিও খাতা খুলেছিলাম। আমার পরিবারের ছেলে-মেয়ে-বউ মিলিয়ে ১১ জন খাতা খুলেছিলাম। সারা দেশ খাতা খুলল। আর কী মিলল? আমি কোনও দূর্নীতি করিনি পশুখাদ্যে।'
দুর্নীতি ইস্য়ুতে কখনও সরকার উল্টে গেছে, আবার কখনও দুর্নীতির হাজার অভিযোগ সত্ত্বেও শাসক দলের ক্ষমতায় প্রত্য়াবর্তন হয়েছে, এই দু ধরণের উদাহরণই এ দেশে আছে। আসন্ন লোকসভা নির্বানে দুর্নীতি কত বড় ফ্য়াক্টর হয়, তার উত্তর আর কয়েক মাস বাদেই মিলবে।