করোনাভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত বর্তমান সঙ্কটের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে থাকার বার্তা দিয়েও তাঁকে লেখা চিঠিতে আমাদের দেশবাসী, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর দেশব্যাপী লকডাউনের কী ‘বিধ্বংসী ক্ষতিকর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া’ হতে চলেছে,তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার আবেদন করলেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন,ভারতকে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার সংখ্যা এক লাফে অনেক বাড়াতে হবে, পাশাপাশি লকডাউনে চালু হওয়া বিধিনিষেধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে সরকারি টাকা দেওয়ার গুরুত্বের কথাও বলেছেন তিনি। চিঠিতে রাহুল ভারতের একান্ত নিজস্ব পরিস্থিতির উল্লেখ করে সওয়াল করেছেন যে, ইতালি বা চিনের মতো দেশগুলি লক ডাউন জারি করেছে, কিন্তু ভারতকে হয়তো আলাদা রাস্তা নিতে হবে। এর কারণ ভারতে দিন আনা দিন খাওয়া গরিবের সংখ্যাটা প্রচুর। ভারতে দৈনিক আয়ের ওপর ভরসা করে চলা গরিবের সংখ্যাটা এতই যে যাবতীয় আর্থিক কার্য্যকলাপ পুরোপুরি বন্ধ রাখা যেতে পারে না। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ স্তব্ধ করে দিলে কোভিড ১৯ ভাইরাসের ফলে যে মৃত্যু ঘটছে, তা কয়েকগুণ বাড়বে। ২১ দিনের লকআউট ঘোষণা হওয়ায় গণপরিবহণ পুরোপুরি স্তব্ধ। দলে দলে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা আয়ের রাস্তা বন্ধ দেখে হেঁটেই নিজের নিজের গ্রামের বাড়ির লক্ষ্যে বাক্স-প্যাঁটরা বেঁধে বেরিয়ে পড়েছেন। এই বিরাট সঙ্কটের উল্লেখ করে রাহুল বলেছেন, সরকারকে এখনই সামাজিক সুরক্ষা জাল জোরদার করে ওদের রক্ষা করতে আমাদের হাতে যা যা সরকারি সম্পদ, রসদ আছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে রাহুল সরকারের আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা ‘প্রথম ভাল পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে তার দ্রুত রূপায়ণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন, যাতে দিনমজুর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের দ্রুত সুরাহা হয়। রাহুল লিখেছেন, বহু দূরে বাড়ি। সেখানে পৌঁছতে ওদের খুবই কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের ওদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে সরাসরি ওদের ব্যাঙ্কে টাকা ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও পরের কয়েকটা মাস ওরা বেঁচে থাকতে পারে। রাহুল আরও লিখেছেন, এই ভাইরাসের প্রকৃত ফল হিসাবে যে বিপর্যয়ের আঘাত আসতে চলছে, তা থেকে আমাদের মুখ্য অর্থনৈতিক ও স্ট্যাটেজিগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাঁচাতে একটা প্রতিরোধের দেওয়াল তৈরি করা জরুরি। এখন থেকে কয়েকটা সপ্তাহ পর আমাদের অর্থনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ হওয়ার প্রভাব টের পাওয়া যাবে। পাশাপাশি যে কোনও পুনর্গঠনের প্রয়াসে ভারতের অসংগঠিত অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, সেকথাও বলেছেন রাহুল।