পটনা: ভোটমুখী বিহারে রাজনীতির পারদ ক্রমশই চড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনে, আরও তীব্র হল বিবাদ। একটি পোস্টারকে ঘিরে এই মুহূর্তে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, যাতে মোদির মা হীরেবেনকে দুর্গা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। মোদিকে দেখানো হয়েছে সিংহ হিসেবে। অন্য দিকে, রাহুল গাঁধী, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব, হেমন্ত সোরেন, এমকে স্ট্যালিন, রেবন্ত রেড্ডির মতো বিরোধী নেতাদের মহিষাসুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। (Narendra Modi Birthday Poster)
১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছরে পা দিলেন মোদি। সেই উপলক্ষেই পটনায় বিরাট ওই পোস্টার চোখে পড়ে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ওই পোস্টার টাঙানো হয়। পোস্টারের দুই দিকে মোদির পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি রয়েছে। মাঝে দুর্গারূপে তুলে ধরা হয়েছে প্রয়াত হীরাবেনকে। দেবীর বাহন সিংহের মুখে বসানো রয়েছে নরেন্দ্র মোদির ছবি। অন্য দিকে, মহিষাসুর হিসেবে পর পর মুখ সাজানো রয়েছে বিরোধী শিবিরের নেতাদের, খানিকটা রাবণের দশ মাথার আকারে। পোস্টারের উপর লেখা রয়েছে, 'মা কা অপমান নহি সহেগা হিন্দুস্তান...দুষ্টোঁ কা নাশ করতি মা। জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা'। (Narendra Modi)
এই পোস্টার ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, "ভোটসর্বস্ব জীবন। ভোট ছাড়া কিছু বোঝে না। কোন জন্মদিবের কথা ওঁরা বলছেন জানি না। উনি তো বলেছেন, বায়োলজিক্য়াল নন! মাকে অপমান করেছেন। ভোটমুখী বিহারে মায়ের পিণ্ডদান করতে আসছেন। একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখ, তারা বিরোধীদের শত্রু মনে করে। গণতন্ত্রে বিরোধীরা রাষ্ট্রব্যবস্থার অঙ্গ বলে ভুলে যান, যা তাঁর এবং RSS-এর ফ্যাসিস্ট চেহারাই তুলে ধরে। আর সিংহ বলবেন না, ৫৬ ইঞ্চির সিংহ, আমেরিকার সামনে কেমন চুপ থাকেন, আমেরিকা আমাদের যখন ধমকায়, অপমান করে, তখন সিংহরূপ দেখা যায়।"
তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, "প্রথম কথা হল, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা দলটার, ধর্ম সম্পর্কেও আইডিয়া নেই। রাবণের একাধিক মাথা ছিল, মহিষাসুরের নয়। ছবিতে পাঁচ-সাতটা মাথা দেখানো হয়েছে অসুরের। আর দ্বিতীয় কথা হল, বিরোধীদের অসুর হিসেবে দেখিয়ে, মোদিকে সিংহ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ২০২১ সালে বাংলার নির্বাচনে কাকে দেবীরূপে আবাহন করে, কাকে মোদিশাহসুরমর্দিনীর তকমা দেওয়া হয়েছিল। মহিষাসুরকে বধ করতে নারীশক্তিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন দেবতারা। বাংলার মানুষও এক নারীকেই এগিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আসল দুর্গা কে, আসল অসুর কে, তা '২১, '২৪-এ দেখিয়েছে বাংলা। কয়েক মাস অপেক্ষা করুন। বাংলার ঊমাও আসছেন মোদিশাহসুরমর্দিনী হিসেবে।"
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "মহিষাসুরবধ কাব্য, কার্টুন করেছে কেউ। এমনি কার্টুনের প্রশংসা হওয়া উচিত, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির যে মনোভাব, তাতে প্রশংসা করতে পারবেন না। বরং শত্রুতার সম্পর্ক খুঁজতে হয়। বিভাজনের রাজনীতি পছন্দ করেন তো! নইলে কার্টুন হিসেবে দেখলেই মিটে যেত! জওহরলাল নেহরু, জ্য়োতিবাবুকে নিয়ে কার্টুন হয়েছে, তাঁরা তার প্রশংসা করেছিলেন। কে কী ভাবে দেখবেন, তার উপর নির্ভর করবে। রাজনৈতিক ভাবে বধ করা গেলেও, শারীরিক ভাবে নিশ্চয়ই নয়। মোদি এবং মোদির রাজনীতির বিরুদ্ধে সকলকে এক হতে হবে। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও কার্টুনকে কার্টুন হিসেবে দেখতে পারেননি, তাই অম্বীকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করা হয়।"
যদিও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "নরেন্দ্র মোদি পৃথইবীর জনপ্রিয়তম রাজনীতিক। তাঁর ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা সর্বস্পর্শী। কোন উৎসাহী কীভাবে তাঁকে দেখবেন, কীভাবে চিত্রায়িত করবেন, তার দায়িত্ব দল বা সরকার নিতে পারে না। নরেন্দ্র মোদিকে কেউ সিংহের সঙ্গে তুলনা করলে, তাঁরা মনে করছেন, এতদিন সেনার মাথা কেটে দিয়ে যেত, আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতাম। আর আজ নরেন্দ্র মোদি সিংহবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত ক্যাম্পগুলিকে ধ্বংস করেছেন সন্ত্রাসবাদীদের। পাকিস্তানের ১১টি এয়ারস্ট্রিপ ভেঙে দিয়েছে, হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছেন পাকিস্তানকে। আমেরিকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্টের তথআকথিত ৫০ শতাংশ শুল্ককে উপেক্ষা করে স্বদেশী পণ্যে ভর করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর সিংহবিক্রম দেখে কেউ উৎসাহিত হলে হবেন। কিন্তু কাউকে অসুর বানানো ঠিক নয়। তবে মা তো মা-ই। এটা দল বা সরকার বলেনি। কেউ উৎসাহিত হয়ে করেছেন। এটা নিয়ে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেই তো দুর্গা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে!"
বিহারে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তাপ বাড়ছে। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি মোদির মায়ের উদ্দেশেও কটূক্তি শোনা যায়। সেই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এই পোস্টার। যদিও বিরোধীদের দাবি, এতদিন মোদি অন্যের মা-স্ত্রীকে নিয়ে কথা বলে এসেছেন, তিনিই পথ দেখিয়েছেন।