নয়াদিল্লি: প্রতি ১০ বছর অন্তর জনগণনাই রীতি।। ১৮৭২ সালে প্রথম আদমশুমারি এবং ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর, ১৯৫১ সাল থেকে অন্তত সেই ধারাই চলে আসছিল। কিন্তু কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণনা আটকে রয়েছে। শেষ বার ২০১১ সালে জনগণনা হয়েছিল। ২০২১ সালে জনগণনা করায়নি মোদি সরকার। এখন শোনা যাচ্ছে ২০২৫ সালের শুরুতে জনগণনা হতে পারে। পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হতে পারে ২০২৬ সালে। এর পাশাপাশি, জনগণনার পদ্ধতিতেও একাধিক পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে খবর। (Census 2025)
দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরুতে জনগণনা এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (NPR) পুনর্নবীকরণের কাজ শুরু হতে পারে। আর সেই সঙ্গেই পাল্টে যেতে পারে জনগণনার চক্র। ২০২৫ সালের পর আবার ২০৩৫ সালে জনগণনা হতে পারে। তার পর ফের জনগণনা হতে পারে ২০৪৫ সালে। নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপের জেরেই ২০২১ সালে জনগণনা করা সম্ভব হয়নি বলে এর আগে যুক্তি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। (India Next Census)
এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি যদিও। বিরোধীরা যে জাতিগণনার দাবি তুলছেন, তার কী হবে, জনগণনার পাশাপাশি জাতিগণনাও সম্পন্ন হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। তবে দিল্লির একটি সূত্র বলছে, রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেনসাস কমিশনারের তরফে ইতিমধ্যেই ৩১টি প্রশ্ন ঠিক করে ফেলা হয়েছে, যা জনগণনার সময় নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। বাড়ির কর্তা বা কোনও সদস্য তফসিলি জাতি বা উপজাতি সম্প্রদায়ের কি না, আগের জমানার মতো এবারও এই প্রশ্ন থাকবে বলে খবর। তবে জাতিগণনা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
দিল্লি সূত্রে খবর, জনগণনার জন্য় ৩১টি প্রশ্ন ঠিক করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, এক বাড়িতে কত জনের বাস, পরিবারের প্রধান কোনও মহিলা কি না, বাড়িতে কতগুলি ঘর রয়েছে, বাড়িতে বিবাহিত সদস্যের সংখ্যা কত, বাড়িতে টেলিফোন রয়েছে কি না, ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে কি না, মোবাইল বা স্মার্টফোন আছে কি না, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, চারচাকার গাড়ি, জিপ বা ভ্যান আছে কি না কাও জানতে চাওয়া হবে। কোন খাদ্য বেশি খাওয়া হয় পরিবারে, জল আসে কোথা থেকে, আলো জ্বালান কী ভাবে, বাড়িতে শৌচাগার আছে কি না, কী ধরনের শৌচাগার রয়েছে বাড়িতে, জমা জল কোথায় গিয়ে পড়ে, স্নান কোথায় করেন, রান্নাঘরে গ্যাস আছে কি না, রান্নায় কোন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, রেডিও, ট্রাঞ্জিস্টর বা টিভি আছে কি না।
কংগ্রেস-সব বিরোধী দলগুলি লাগাতার জাতিগণনার দাবি তুলে আসছে। দেশের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ঠিক কত, তা প্রকাশ করার দাবি তুলছে তারা। শুধু তাই নয়, সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়েও একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। জনগণনার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরই সীমানা পুবর্বিন্যাসের কাজে হাত দিতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলি এ নিয়ে সন্দিহান। সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে দক্ষিণের রাজ্যগুলির লোকসভা আসনের সংখ্যা কমে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১১ সালে শেষ বার যে জনগণনা হয়, সেই অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটি। প্রত্যেক ১০০০ জন পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ছিল ৯৪০। সাক্ষরতার হার ছিল ৭৪.৪ শতাংশ। ১৭.৬৪ শতাংশ ছিল ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮.৮৪ শতাংশ গ্রামে থাকেন, ৩১.১৬ শতাংশ থাকেন গ্রামে। দেশে মোট ২৮টি রাজ্য, সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে বলে ঘোষণা হয়। সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হিসেবে গন্য হয় উত্তরপ্রদেশ, প্রায় ২০ কোটি। সবচেয়ে কম জনসংখ্যা ছিল কেন্দ্রশাসিত লক্ষদ্বীপে, ৬৪ হাজার ৪২৯। ভৌগলিক ভাবে দেশের বৃহত্তম রাজ্য ঘোষিত হয় রাজস্থান, গোটা সবচেয়ে ছোট, ৩ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার।