নয়াদিল্লি: পাঠ্যবই থেকে এবার বাবরি মসজিদের নামই মুছে ফেলা হল। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)-র দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে অযোধ্যার ইতিহাসে কাটছাঁট করা হয়েছে। আগে যেখানে চারটি পাতায় অযোধ্যার ইতিহাস লিপিবদ্ধ ছিল, বর্তমানে সেটিকে দুই পাতায় এনে ফেলেছে NCERT, যা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। (NCERT Rewrites Ayodhya Dispute)


গত সপ্তাহেই NCERT-র দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়ের নয়া সংস্করণ বাজারে এসেছে। বইয়ে অযোধ্যা বিবাদ নিয়ে যে অধ্যায়টি রয়েছে, তাতে কোথাও বাবরি মসজিদের উল্লেখই নেই। কাটছাঁট করে দু'পাতায় অযোধ্য়ার যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তাতে বাবরি মসজিদকে 'তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (NCERT Textbook Revised Again)


শুধু তাই নয়, গুজরাতের সোমনাথ থেকে অযোধ্যার উদ্দেশে যে রথযাত্রা বের করেছিল বিজেপি, তার কোনও উল্লেখ নেই বইয়ে। উল্লেখ নেই করসেবকদের তাণ্ডবের। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে, তা-ও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সেই সময় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া, কিছুই আর নেই বইয়ে। 


আরও পড়ুন: NEET Controversy: কেউ লিখে দেন ব্ল্যাঙ্ক চেক, মাথাপিছু ৬৬ লক্ষও! NEET দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ায় অভিযুক্ত কেন্দ্র


NCERT-র দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে কিছু সংশোধন হচ্ছে বলে আগেই খবর মিলেছিল। কিন্তু কী সংশোধন হচ্ছে, কতটা সংশোধন হচ্ছে, তা জানা যায়নি। নয়া সংস্করণ সামনে আসার পরই অযোধ্যার ইতিহাস সংশোধন করা হয়েছে বলে জানা গেল। 


ঠিক যা যা পাল্টে ফেলা হয়েছে-



  • NCERT-র আগের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়ে বাবরি মসজিদকে ১৬ব শতকে নির্মিত মসজিদ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। মুঘল সম্রাট বাবরের জেনারেল মীর বাকি সেটির নির্মাণ করেছিলেন বলেও লেখা ছিল বইয়ে। নয়া সংস্করণে বাবরি মসজিদের নামই নেই কোথাও। বরং লেখা হয়েছে, ১৫২৮ সালে শ্রী রামের জন্মস্থানে তিন গম্বুজ সম্বলিত একটি নির্মাণ গড়ে তোলা হয়, যাতে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীকচিহ্ন দৃশ্যমান ছিল। কাঠামোর ভিতরে এবং বাইরে হিন্দু সৌধের ধ্বংসাবশেষ পরিলক্ষিত হতো। 

  • পুরনো সংস্করণে লেখা ছিল, ফৈজাবাদ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার পর দুই তরফেই গোলমাল দেখা দেয়। সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, করসেবকদের উন্মাদনা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং দাঙ্গার উল্লেখ ছিল আগের  সংস্করণে। নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, 'অযোধ্যা নিয়ে আফশোসের অন্ত ছিল না বিজেপি-র।' ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে বলে অযোধ্যা থেকেই ধারণা জন্মায় বলেও উল্লেখ রয়েছে বইয়ে।

  • নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, 'শ্রী রামের জন্মভূমিতে মন্দির ভেঙে তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণটি দাঁড় করানো হয় বলে বিশ্বাস জন্মায়। মন্দিরের শিলান্যাস হওয়ার পরও নির্মাণের কাজ এগোয়নি। ফলে হিন্দুদের মনে ধারণা জন্মায় যে রামজন্মভূমি নিয়ে তাঁদের  আবেগকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, মুসলিমরা গোটা কাঠামোর উপর দখলদারি চেয়ে দাবি জানায়। সেই নিয়ে দুই তরফে উত্তেজনা বাড়ে। আইনি টানাপোড়েন শুরু হয়। দীর্ঘদিনের এই বিবাদের নিষ্পত্তি চেয়েছিল দুই পক্ষই। ১৯৯২ সালে কাঠামোটি ধ্বংসের পর সমালোচকদের একাংশের মনে হয়েছিল, ভারতীয় গণতন্ত্রের নৈতিকতাই ঝুঁকির সম্মুখীন'।

  • ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিবাদ নিয়ে যে রায় তার উল্লেখ রয়েছে নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের রায়ের অংশটির নাম রাখা হয়েছে 'From Legal Proceedings to Amicable Acceptance'। ওই অংশে লেখা রয়েছে, 'বহুধর্ম এবং বহু সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের বিবাদের ক্ষেত্রে সাধারণত আইনি পথেই সমাধান বেরোয়'। আদালত যেভাবে বিতর্কিত জায়গাটি রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের হাতে তুলে দেয় এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র জায়গা বরাদ্দ করার নির্দেশ দেয়, তাতে ভারতীয় সংবিধানের সম্মানরক্ষা হয়েছে বলেও লেখা রয়েছে বইয়ে। ঐতিহাসিক রেকর্ড এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিত্তিতেই আদালত রায় দেয় বলে দাবি করা হয়েছে বইয়ের নয়া সংস্করণে। যদিও আদালত জানিয়েছিল, মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছে বলে কোনও যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

  • NCERT-র বইয়ের আগের সংস্করণে খবরের কাগজের প্রতিবেদনের ছবি ছিল, যাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের উল্লেখ ছিল। 'অযোধ্যা বিজেপি-র সবচেয়ে বড় ভুল' বলে অটলবিহারি বাজপেয়ীর মন্তব্যেরও উল্লেখ ছিল। সেগুলির কিছুই আর নেই নয়া সংস্করণে। 


বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিংহ। ১৯৯৪ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট। NCERT-র আগের পাঠ্যবইয়ে তার উল্লেখ থাকলেও, নয়া সংস্করণে নেই।