নয়াদিল্লি: ভারতে নির্বাচনী রাজনীতিতে অশ্বমেধ ঘোড়া হয়ে উঠেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নেপালে গড়ে উঠেছে নেপাল জনতা পার্টি (NJP)। শুধু নামেই মিল নেই, দুই দলের আদর্শ, ভাবধারাও এক। এমনকি প্রতীকীচিহ্ন পর্যন্ত পদ্ম, ব্যাকগ্রাউন্ডে গেরুয়ার প্রলেপ। ত্রিভুবন নাথ পাঠক নেপালকে হিন্দুরাষ্ট্রের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতশ্রুতি-সহ জোর কদমে প্রচার চালাচ্ছেন। (Nepal Janata Party)


তবে শুধুমাত্র বিজেপি-কে দেখে অনুপ্রাণিত বললে ভুল হবে, NJP এবং BJP-র মধ্যে নিবিড় সংযোগ রয়েছে। ভারতের BJP নেতাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই বৈঠক করেন ত্রিভুবন। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেই অধিকাংশ বৈঠক হয়। নেপালের রাজনীতি মূলত বামপন্থা এবং মধ্য-বামপন্থা নিয়ন্ত্রিতই থেকেছে এযাবৎ। প্রথম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে তাই ইতিমধ্যেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে NJP. (Nepal Politics)


গত বছর স্থানীয় নির্বাচনে ১৭টি আসনে জয়ী হয় NJP. ২০২৭-এর সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এই মুহূর্তে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দলের সদস্য যোগী পুরি, যিনি 'বাবা' নামেও পরিচিত, তিনি খোলাখুলি জানিয়েছেন যে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু নাগরিকের স্বার্থ রক্ষার্থেই হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা উচিত নেপালের। তার জন্য বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। 


আরও পড়ুন: Transgender Reservations: শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের জন্য সংরক্ষণ! জবাব চেয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে নোটিস


অগাস্ট মাসের শুরুতেই NJP-র ভাইস প্রেসিডেন্ট খেমনাথ আচার্য দিল্লি সফরে এসেছিলেন। সেখানে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, লাদাখের সাংসদ জামইয়াং শেরিং নামগিয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, যোগগুরু বাবা রামদেবের সহযোগী বালকৃষ্ণের সঙ্গেও দেখা করেন। দিল্লি থেকে হরিয়ানা গিয়েও বিজেপি-র অন্য় নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। 


BJP-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ (RSS)-এর কর্মসূচিতেও নিয়মিত যোগদান করেন খেমনাথ। নেপাল জনতা পার্টি তৈরিতে RSS-এর অবদানের কথা তুলে ধরতেও পিছপা হন না। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পক্ষে তাঁর বক্তব্য, "দেবভূমি নেপালের ৮০ শতাংশ নাগরিক হিন্দু। কিন্তু তথাকথিত ধর্মনিরপেশ্র নেতাদের ভয়ে নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে ভয় পান তাঁরা। ধর্মান্তরণের খাঁড়াও ঝুলছে তার উপর। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব আমরা। কিন্তু বর্তমানে নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করার সময় এসেছে।"


২০০৪ সালে NJP-র প্রতিষ্ঠা হয় নেপালে। ২০০৬ সাল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু গতবছরই প্রথম সাফল্য পায় তারা। এর নেপথ্যে BJP-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ অনুঘটকের কাজ করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এ নিয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে একটি রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়, যাতে নেপালের রাজনীতিতে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হস্তক্ষেপ ঘটছে বলে দাবি করা হয়। নেপালের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকদের টাকার জোগানও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই রিপোর্টে।