তেহরান: দমনপীড়নের অভিযোগ ছিল ভুরি ভুরি, এবার 'হিজাব-নীতি' (Hijab) না মানায় মহিলাদের মনোচিকিৎসা করানোর অভিযোগ উঠল ইরান সরকারের (Iran Government) বিরুদ্ধে। তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে ইরানের নীতি পুলিশ। ক্ষোভের আঁচে জ্বলছে গোটা দেশ। বিক্ষোভ থামাতে ভয়ঙ্কর দমনপীড়নের পথ নিয়েছে তেহরান, অভিযোগ ছিল এমনও। এবার 'হিজাব-নীতি' না মানলে মনোরোগের চিকিৎসা করাতে পাঠাচ্ছে সরকার, শোনা গেল এই কথাও।
কী পরিস্থিতি?
সংবাদসংস্থা এএনআই -এর দাবি, যেনতেনপ্রকারেণ হিজাব-নীতি জারি করতে বদ্ধপরিকর ইরান-সরকার (Iran) এবার সেই সমস্ত মহিলাদের কাউন্সেলিং করতে পাঠাচ্ছে যাঁরা কোনও ভাবেই মাথা ঢাকতে নারাজ। প্রতিবাদে সরব স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জড়িত বহু সংগঠন। তাদের বক্তব্য, নিজেদের অবস্থান চাপিয়ে দিতে সাইকোলজিক্যাল থেরাপির অপব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তবে যে কোনও ধরনের সমালোচনায় যে তেহরান কর্ণপাত করতে চায় না, সেটাও স্পষ্ট। হালে, ইরানের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী, আফসানেহ বেয়েগান, প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে মাথা না ঢেকেই প্রকাশ্যে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তার আগে, একাধিকবার ইনস্টাগ্রামেও মাথায় কোনও রকম আবরণ ছাড়াই ছবি পোস্ট করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে আফসানেহের উপর তীব্র অসন্তুষ্ট ইরান সরকার তাঁকে দু'বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সপ্তাহে এক বার করে 'সাইকোলজিক্যাল সেন্টারে' যেতে নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, 'অ্যান্টি ফ্যামিলি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার' নামে একটি মনোরোগের চিকিৎসা করাতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও সমালোচকদের বক্তব্য, তেহরান যে হিজাব-নীতি বলবৎ করার ব্যাপারে কোনও আপস করতে রাজি নয়, এই নির্দেশ তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, নিয়মের অন্যথা করলে কেউই পার পাবেন না, এটি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চায় সে দেশের সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ১৯৭৯ সালে ইরানে যে বিপ্লব হয়েছিল, তার পরবর্তী সময়ের অন্যতম তারকা এই আফসানেহ। সে দেশের টেলি-দুনিয়ার অন্যতম শ্রদ্ধেয় ও বিশিষ্ট তারকা। তাঁর সঙ্গেও ব্যতিক্রম করা হচ্ছে না, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে সরকার।
তবে শুধু আফসানেহ নন। আজাদেহ সামাদি নামে আরও এক অভিনেত্রীর মধ্যে 'অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার' চিহ্নিত করেছেন ইরানের বিচারপতিরা। হালে, একটি শেষকৃত্যে হিজাবের পরিবর্তে ওই অভিনেত্রী 'হ্যাট' পরে এসেছিলেন। তার পরই এই 'রোগনির্ণয়', সঙ্গে নির্দেশ। তাঁকেও প্রত্যেক সপ্তাহে এক বার সাইকোলজিক্যাল সেন্টারে যেতে হবে। তবে সকলের জন্য একই রকম ব্যবস্থা, তা নয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, হিজাব ছাড়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে, এক মহিলাকে মাসখানেক মর্গে মৃতদেহ সাফ করার শাস্তিও দেওয়া হয়েছে ইরানে।
সব কিছুরই লক্ষ্য এক। হিজাব-নীতি নিয়ে কোনও আপস করা যাবে না, এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া। গত সেপ্টেম্বরে নীতি পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে তুমুল ক্ষোভ চলছে দেশে। বহু মহিলাই হিজাব না পরার কথা জানিয়ে প্রকাশ্য়ে এগিয়ে এসেছেন। পাল্টা দমনপীড়নের অভিযোগও কম নয়। সংঘাত যে থামেনি, সেটা স্পষ্ট আরও একবার।
আরও পড়ুন:সৌরনীলের মৃত্যুতে এখনও হাহাকার, সরেছেন হকাররাও, পার্থর দফতর সরাতে রা কাড়ছেন না কেউ