হিন্দোল দে, প্রকাশ সিনহা, আবির দত্ত, কলকাতা: বুধবারের হাড়হিম করা দৃশ্যগুলি এখনও ভুলতে পারছেন না নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দারা। কানে বাজছে, কান ফাটানো গুলির শব্দগুলি। সেই সঙ্গে আবাসনের ঢিলেঢালা নিরাপত্তার অভিযোগ তুলেও ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন আবাসিকরা।


নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দা সুব্রত সাহা বলেন, আমরা বারুদের স্তূপের উপর বসে আছি, নিজের ঘরে আমরাই পরবাসী। আরেক বাসিন্দা পিয়ালী বসু বলেন, কালকের ঘটনার পর যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছি। বুধবার STF ও দুই গ্যাংস্টারের গুলির লড়াই সাপুরজির যে আবাসন কেঁপে উঠেছিল, সেখানে মোট ফ্ল্যাট রয়েছে সাড়ে ২২ হাজার। তার মধ্যে বর্তমানে ১৬ হাজার ফ্ল্যাটে প্রায় ৪০ হাজার আবাসিক বসবাস করেন। 


অথচ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এরকম বিশাল আবাসনের নিরাপত্তার ভরসা নাকি মাত্র তিনটি সিসি ক্যামেরা। প্রায় ১৬ হাজার ফ্ল্যাটে ৩টি সিসিটিভি, বাসিন্দাদের দাবি বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই এই ধরনের ঘটনা। রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। আবাসনের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের কথায়, এত ফ্লাট থাকলেও, ঢোকার সময় মেন গেটে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, আর কয়েকটি রয়েছে, কিন্তু সর্বত্র নেই, সুতরাং নজরদারির অভাব রয়েছে। সিসিটিভি নেই, নিরাপত্তা নেই। পরিবার নিয়ে থাকি।


বুধবারের ঘটনার পর এদিন পুলিশের ছয়লাপ ছিল নিউটাউনের আবাসনে। কিন্তু সেখানে ঢোকার মুখে তেমন কোনও নিরাপত্তার কড়াকুড়ি দেখা গেল না। শুধুমাত্র গাড়ির নম্বর নোট করেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হল। আর কিছুই জিজ্ঞাসা করা হল না। আবাসন জুড়ে সিসিটিভি নেই, শুধু ঢোকার রাস্তাতেই রয়েছে, নিরাপত্তাতেও খামতি রয়েছে, অনিয়ম রয়েছে বলে অভিযোগ।


বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, এই ঢিলেঢালা নিরাপত্তার জন্যই নাকি, ভিন রাজ্যের গ্যাংস্টাররা এখানে ঘাঁটি গাড়ার সুযোগ পেয়েছিল। আবাসনের বাসিন্দা সুব্রত সাহা বলেন, সিকিউরিটি খুব ঢিলেঢালা, কোনও বাধা নেই, সিকিউরিটি নিজেরাই মার খায়, কোনও পাওয়ার দেওয়া হয়নি, শুধু বসিয়ে রাখা হয়েছে, ২ গেটে ৩ সিসিটিভি, ১৬ হাজার ফ্ল্যাট, ৪০ হাজার মানুষ কম বেশি বসবাস করে। বার বার দাবি করেছি সিসি ক্যামেরার।


সিকিউরিটি আছে কিন্তু রুল ফলো করে না। অভিযোগ সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দা সানি গোমসের। তিনি বলেন নাম লেখা উচিত, কারা আসছে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ দেখে না। অন্য আবাসনে যেটা করা হয়। ছাদের সঙ্গেছাদের কানেকশন, এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে যাওয়া যায়, রীতিমতো ভয়ে আছি। সাপুরজির সুখবৃষ্টি আবাসনে তিন ধরনের ফ্ল্যাট আছে। সেই অনুযায়ী বছরে মেইনটেন্যান্স ফি নেওয়া হয়। আবাসিকরা জানিয়েছেন, LIG বিভাগে রয়েছে সিঙ্গল বেডরুমের ফ্ল্যাট - যার বার্ষিক মেইনটেন্যান্স ফি ৬ হাজার টাকা। MIG-র ফ্ল্যাটগুলিতে রয়েছে ২টি করে বেডরুম, মেইনটেন্যান্স ফি বছরে ২১ হাজার টাকা। HIG-তে রয়েছে ৩ বেডরুমের ফ্ল্যাট। মেইনটেন্যান্স ফি ২৮ হাজার টাকা।


আবাসনের বাসিন্দার কথায়, সিকিউরিটি ব্যবস্থা নেই। কয়েকবার সাপুরজিকে বলেছি, কোনও অ্যাকশন নেয়নি, এই ধরনের ঘটনা আবারও হতে পারে, আরও বড় হতে পারে। মেনটেন্যান্স নেয় কোনও কাজ হয় না। সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে যে অভিযোগ তুলছেন, তাতে সহমত প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের একাংশ। এখন প্রশ্ন হল, এত বড় ঘটনার পরও কি নিরাপত্তা নিয়ে কিছু ভাববে না আবাসনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থা?