নয়াদিল্লি: ঘোষণাপর্ব থেকেই বিতর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অগ্নিপথ প্রকল্প’। ২১ বছরের ‘অগ্নিবীরে’র মৃত্যুতে এবার সেই বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি দিল। জম্মু ও কাশ্মীরে সম্প্রতি তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁর দেহ আনা থেকে, সৎকার সবকিছুই পরিবারকে করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি সেনাকর্মীর মৃত্যুতে যে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়, তাও মেলেনি বলে দাবি পরিবারের। তাতেই ফের একবার ‘অগ্নিপথ প্রকল্প’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। (Agniveer Death)


পঞ্জাবের মানসার বাসিন্দা অমৃতপাল। একমাস আগেই ‘অগ্নিবীর’ হিসেবে কাজে যোগ দেন। গত ১০ অক্টোবর কাশ্মীরের পুঞ্চে তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর মাথায় গুলি লাগার ক্ষত ছিল। ‘অগ্নিপথ প্রকল্পে’র আওতায় কাজে যোগ দেওয়া কোনও যুবক এই প্রথম কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেলেন। আর সেই নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। (Agnipath Yojana)


সংবাদমাধ্যমে অমৃতপালের বাবা জানিয়েছেন, ১০ তারিখ ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। দিব্যি হাসিখুশি ছিলেন অমৃতপাল। সামনে তুতো বোনের বিয়ে রয়েছে। সেই উপলক্ষে ২৪ তারিখ ছুটিতে বাড়ি আসার কথাও ছিল। প্রশিক্ষণ শেষ হতে সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ি এসেছিলেন। তার পর ২০ সেপ্টেম্বর পুঞ্চে কাজে যোগ দেন। বাড়ি আসার জন্য মুখিয়ে ছিলেন তিনি। সেই ছেলের দেহ ফিরবে ভাবতে পারেননি পরিবারের কেউ।


আরও পড়ুন: Adani Group: ‘কয়লার দাম বাড়িয়ে ৬০০০ কোটি পকেটে, বিদ্যুৎবাবদ মাশুল গুনেছেন মানুষ’, ফের কাঠগড়ায় আদানিরা


কী করে মৃত্যু হল অমৃতপালের, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত বলে দাবি তুলেছেন। অমৃতপালের বাবা জানান, একজন হাবিলদার এবং দুই জওয়ানকে ছেলের দেহ সঙ্গে নিয়ে গ্রামে আসেন। ‘গার্ড অফ অনার’ দিতে সেনার তরফে কেউ হাজির হননি। ছেলের কপালের বাঁ দিকে গুলির লাগার ক্ষত ছিল বলে জানান তিনি। শেষে স্থানীয় পুলিশই অমৃতপালকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেয় বলে জানা গিয়েছে।


বিষয়টি লামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেনা বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘অগ্নিপথ প্রকল্পে’র আওতায় ‘অগ্নিবীর’দের সৈনিকের মর্যাদা দেওয়ার বিধানই নেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা শিরোমণি অকালি দলের হরসিমরত কউর বাদলের মতে, সৈনিকদের সকলের সমান মর্যাদা প্রাপ্য। সেই নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠলে সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, নিজের চালানো গুলিতেই মারা গিয়েছেন অমৃতপাল।


সেনার তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অগ্নিবীর ইউনিটের ভাড়া করা অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে মৃতের দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শেষকৃত্যে সিভিল ড্রেসে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র কমিশনড অফিসার এবং আরও চার জন। নিজের ছোড়া গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে, তাই গার্ড অফ অনার দেওয়ার রীতি নেই’।


যদিও অমৃতপালের পরিবারের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া তাঁদেরই মেটাতে হয়েছে। শেষকৃত্যে সেনার তরফে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। শুধু তাই নয়, ক্ষতিপূরণ এড়াতেই অমৃতপালের মৃত্যু নিয়ে বিশদ তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, নিজের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বলে চালানো হচ্ছে, এমন দাবিও করেন গ্রামের মানুষজন।


২০২২ সালের ১৪ জুন কেন্দ্রীয় সরকার ‘অগ্নিপথ প্রকল্পে’র ঘোষণা করে। এখনও পর্যন্ত দুই ব্যাচ মিলিয়ে ৪০ হাজার ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ পর্ব সেরে কাজে যোগ দিয়েছে প্রথম ব্যাচটি। এই প্রকল্পের আওতায়, চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ‘অগ্নিবীর’দের। এই সময়সীমা শেষ, হলে তাঁদের মধ্যে থেকে ২৫ শতাংশ সেনায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে আবারও নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তাঁদের। গোড়া থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক ছিল। অমৃতপালের মৃত্যু সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে।