কলকাতা: মুর্শিদাবাদে আল-কায়দা-যোগে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এনআইএ যে তার হদিশ পেয়েছে তা আঁচ করে পালানোর ছক কষে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান মোল্লা। কয়েকজনকে ফোনও করে।


কাদের ফোন করেছিল ওই জঙ্গি, খতিয়ে দেখছে এনআইএ। পাশাপাশি, ডোমকল থেকে ধৃত নাজমুস শাকিবের মোবাইল ফোনে মিলেছে কাশ্মীরের কয়েকজনের নম্বর।


কী উদ্দেশ্যে এদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত কম্পিউটার সায়েন্সের ওই ছাত্র তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনআইএ ছাড়াও ধৃত জঙ্গিদের জেরা করবে বেঙ্গল এসটিএফ। খবর সূত্রের।


প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার ৬ সন্দেহভাজন জঙ্গি। কেরল থেকে গ্রেফতার মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আরও তিন সন্দেহভাজন। ধৃতদের দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নাশকতার ছক ছিল বলে এনআইএ সূত্রে দাবি।


শুক্রবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের মধ্যপাড়া থেকে প্রথমে পাকড়াও করা হয় আবু সুফিয়ানকে। এনআইএ সূত্রে দাবি, ধৃতের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন ছাড়াও ডিটোনেটরে ব্যবহার করা হয় এমন ৬ ভোল্টের ব্যাটারি, ধাতব বর্ম, দু’টি সকেট বোমা, বাজি তৈরির সরঞ্জাম এবং বাজি উদ্ধার হয়েছে।


পরে ডোমকলের জয়রামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় লিউ ইয়ান আহমেদকে। এনআইএ সূত্রে দাবি, তাঁর ঘর থেকে উদ্ধার হয় ধারালো অস্ত্র, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোটরবাইকের টুলবক্সে লুকিয়ে রাখা দেশি পিস্তল।


এরপর জলঙ্গির মধুবনা থেকে মইনুল মণ্ডল, উত্তর ঘোষপাড়া থেকে আতিউর রহমান, ডোমকলের নওদাপাড়া থেকে আল মামুন কামাল এবং গঙ্গাদাসপাড়া থেকে নাজমুস শাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।


এই নাজমুস আবার ডোমকল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র বলে দাবি পরিবারের। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর মোবাইল ফোন, সিম, বই ও অন্যান্য নথি মিলেছে।


শনিবারই তাদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ধৃতদের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ট্রানজিট রিমান্ডে তাদের দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে এনআইএ।


অন্যদিকে শনিবার ভোরে কেরল থেকে আল কায়েদার সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে এনআইএ। এরনাকুলাম থেকে গ্রেফতার করা হয় মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস ও মোশারফ হোসেনকে। এনআইএ সূত্রে দাবি, এই তিনজনও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।


কীভাবে খোঁজ মিলল সন্দেহভাজন এই ৯ জঙ্গির? এনআইএ সূত্রে দাবি, তাঁদের কাছে খবর ছিল, পাকিস্তানের সাহায্য নিয়ে ভারতে নতুন করে অশান্তি পাকাতে চাইছিল আল কায়দা, আইএস-সহ বিভিন্ন সংগঠন।


এমনকী পুলওয়ামা হামলায় ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ও সেন্ট্রাল আইবি মারফৎ এই সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য পায় এনআইএ। এর প্রেক্ষিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি কেস করে এনআইএ।


বৃহস্পতিবার, একটি ফোন নম্বর পায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে জিপিএস লোকেশন দেখে, এনআইএ জানতে পারে মুর্শিদাবাদ ও কেরলে ঘাঁটি গেড়েছে আল কায়দা।


জঙ্গিদের ধরতে, শুক্রবারই কলকাতায় চলে আসেন এনআইএ-এর ১২ জন অফিসার। সূত্রের খবর, ঠিক হয় আর্জেন্ট অপারেশন হবে। কলকাতা দফতরে কয়েকজন অফিসারকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। এরপর বিএসএফ-এর সাহায্য নিয়ে মুর্শিদাবাদে হানা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।


এনআইএ সূত্র দাবি, বাংলা ও কেরলে ইন্টার স্টেট মডিউল তৈরি করেছে আল কায়দা। ধৃতদের সঙ্গে পাকিস্তানের আল কায়েদা মডিউলের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।


সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত তারা। ধৃত ৬ সন্দেহভাজন জঙ্গি, অন্তত ৬ মাস ধরে মুর্শিদাবাদে ঘাঁটি গেড়েছিল। কেরল, দিল্লি, কাশ্মীরেও গিয়েছিল তারা। সেখানে তারা প্রশিক্ষণ নেয় কিনা, খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।


কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং নিউ জেএমবি, ধৃতদেরর হ্যান্ডেলার হিসেবে কাজ করত বলে অনুমান। ভারতের ইন্টার স্টেট মডিউলকে কাজে লাগিয়েই দিল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গায়, আল কায়েদার হামলার ছক ছিল।


এনআইএ সূত্রে দাবি, দেশের বিভিন্ন সংগঠনের থেকে অর্থ পেত আল কায়েদার ইন্টারস্টেট মডিউলগুলি। এমনকি এই মডিউলের সদস্যরা দিল্লিতে গিয়ে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল বলেও দাবি এনআইএ সূত্রে।


৯ জনকে গ্রেফতারির পর, নাশকতার ছক ভেস্তে গিয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।