উত্তর ২৪ পরগনা: দেবাঞ্জন খুনের সপ্তাহখানেক আগেও, তাঁর বর্তমান বান্ধবী দেখা করেছিলেন প্রাক্তন প্রেমিক প্রিন্সের সঙ্গে। প্রিন্সের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা দামের আইফোন উপহার নেন ওই তরুণী। প্রাক্তন প্রেমিকাকে ৪০ হাজার টাকার পুজোর জামাকাপড়ও কিনে দেন প্রিন্স। প্রাক্তন প্রেমিক প্রিন্সের কাছ থেকে পুজোর আগে এত উপহার নেওয়ার পর, নবমীতে বর্তমান বন্ধু দেবাঞ্জনের সঙ্গে ঘুরতে বেরোন ওই তরুণী! আর সেই রাতেই তাঁকে বাড়ি ছেড়ে ফিরতে গিয়ে খুন হন দেবাঞ্জন। যে ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত প্রিন্স। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতায় দেবাঞ্জন দাস খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে উঠে এল নতুন তথ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় প্রিন্স সিংহ জানিয়েছেন, খুনের কয়েকদিন আগে তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন প্রেমিকা তথা দেবাঞ্জনের বান্ধবীর দেখা হয়। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপর তরুণীর এগারো হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনটি আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন তিনি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফের ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করেন প্রিন্স। পুরনো ফোনটি ভেঙে দেওয়ার অনুশোচনায় প্রাক্তন বান্ধবীকে লক্ষাধিক টাকা দামের আইফোন কিনে দেন। তারপর তাঁকে শপিং করতে নিয়ে যান। ৪০ হাজার টাকার জামাকাপড়ও কিনে দেন। এরপরও নবমীর রাতে ওই তরুণী দেবাঞ্জনের সঙ্গে ঘুরতে বেরোন। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় প্রিন্স জানিয়েছেন, এ কথা জানার পরই তিনি আর রাগ ধরে রাখতে না পেরে, দেবাঞ্জনকে খুন করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, গাঁজায় আসক্ত ছিলেন প্রিন্স। প্রায় সাড়ে তিন মাস রিহ্যাবে ‍কাটিয়েছেন। তার জেরেই প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ। কিন্তু, অতিরিক্ত অধিকারবোধে বান্ধবীকে কারোর সঙ্গে মিশতে দিতেন না তিনি। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় প্রিন্স জানিয়েছেন, দেবাঞ্জনের সঙ্গে প্রাক্তন প্রেমিকার ঘনিষ্ঠতা একেবারেই মানতে পারেননি। তাই খুনের ছক কষেন। প্রায় দেড় মাস আগে খুনের পরিকল্পনা করেন প্রিন্স। খুনের উদ্দেশ্যেই এক বন্ধুর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ সূত্রে দাবি, খুনের আগে দেবাঞ্জন ও তার বান্ধবীর গতিবিধি সম্পর্কে প্রিন্সকে খবর দেন তাঁর বন্ধু বিশাল মারু। পুলিশি জেরায় প্রিন্স জানিয়েছেন, নবমীর রাতেই দেবাঞ্জনকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। দু’জনের একসঙ্গে বেরোনোর খবর পেয়ে, গাড়ির পিছু নেন প্রিন্স। প্রিন্সের দাবি, ওইদিন রাতে গাড়ি থেকে নেমে দেবাঞ্জনের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়েন তাঁর বান্ধবী। তা দেখে আরও রেগে যান প্রিন্স। এরপরই বিশালের স্কুটার নিয়ে তাড়া করেন দেবাঞ্জনের গাড়ি। বান্ধবীর প্রাক্তন প্রেমিককে ধাওয়া করতে দেখে, গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন দেবাঞ্জনও। বিরাটির স্কুল রোডের কাছে আড়াআড়িভাবে স্কুটার দাঁড় করিয়ে দেবাঞ্জনের গাড়ি আটকায় প্রিন্স। সেখানেই বান্ধবীকে নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর, দেবাঞ্জনকে পরপর দুটি গুলি করেন তিনি। এরপর প্রায় ১০০ মিটার গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা মারে দে‍বাঞ্জনের গাড়ি। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের কিনারায় সব থেকে বড় সূত্র ছিল দেবাঞ্জনের মোবাইল ফোন। প্রিন্স যখন দেবাঞ্জনকে তাড়া করেছিল, তখন বারবার বান্ধবীকে ফোন করেন দেবাঞ্জন। কিন্তু ফোন রিসিভ করেননি তরুণী। সেই সময় দেবাঞ্জনের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অটোমেটিক কল রেকর্ড হচ্ছিল। ফলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও গুলির শব্দ রেকর্ড হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, বজবজে থেকে ধৃত প্রিন্সের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা।