নয়াদিল্লি: আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিহাড় জেলে ফাঁসি হল নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া চারজনের। ২০১৮ সালের দিল্লি কারাগার আইন অনুসারে পবন গুপ্ত, অক্ষয় সিংহ ঠাকুর, বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংহর সাজা কার্যকর হল। দেখে নেওয়া যাক, ফাঁসি সংক্রান্ত কী কী নিয়ম রয়েছে।


নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে সাজা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিকে আইসোলেশন সেলে রাখা হয়। যদি অপরাধী চায়, তাহলে শেষবার পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হয়। নির্দিষ্ট দিনে সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফাঁসি দিতে হয়। ফাঁসির সময় জেলের সুপার, ডেপুটি সুপার, ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ও রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসারকে হাজির থাকতে হয়। অপরাধী যদি চায়, তাহলে ধর্মগুরুও হাজির থাকতে পারেন। তবে চাইলেও, অপরাধীর আত্মীয়রা কোনওভাবেই ফাঁসির সময় হাজির থাকতে পারবেন না। তবে গবেষণার জন্য প্রয়োজনে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিদ ও মানসিক রোগের চিকিৎসককে ফাঁসির সময় হাজির থাকার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

যেদিন ফাঁসি দেওয়া হয়, সেদিন ভোরে জেল সুপারকে দেখে নিতে হয়, সাজা কার্যকর সংক্রান্ত কোনও প্রক্রিয়া বাকি আছে কি না। এরপর তাঁকে আইসোলেশন সেলে গিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে উইল সহ বিভিন্ন নথিতে সই করিয়ে নিতে হয়। এরপর সাজাপ্রাপ্তকে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যান হেড ওয়ার্ডার ও ৬ ওয়ার্ডার। দু’জন করে ওয়ার্ডার সাজাপ্রাপ্তর সামনে ও পিছনে থাকেন এবং দু’জন তার হাত ধরে রাখেন। সাজাপ্রাপ্তকে ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে তার পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেন জেল সুপার। তিনি সাজাপ্রাপ্তকে তার জানা ভাষায় মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনান। এরপর সাজাপ্রাপ্তর চোখ ঢেকে দেওয়া হয়। তাকে কোনওভাবেই ফাঁসিকাঠ দেখতে দেওয়া হয় না। তাকে যখন ফাঁসিকাঠে তোলা হয়, তখনও হাত ধরে থাকেন ওয়ার্ডার। ফাঁসির দড়ির ঠিক নীচে দাঁড় করানোর পর সাজাপ্রাপ্তর পা বেঁধে দেন ফাঁসুড়ে। এরপর তিনি গলায় দড়ি পরিয়ে দেন। ফাঁস ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না এবং গলায় দড়ি ভালভাবে লাগানো হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখে নেন জেল সুপার। এরপর ওয়ার্ডারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপারের নির্দেশে সাজা কার্যকর করেন ফাঁসুড়ে। ফাঁসি দেওয়ার পর আধঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয় দেহ। এরপর রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার দেহ পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, মৃত্যু হয়েছে। শেষে মৃত ব্যক্তির ধর্ম অনুযায়ী সৎকার করা হয়।

ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল। নিয়ম অনুযায়ী, ফাঁসুড়ের পারিশ্রমিক দিয়েছে দিল্লি সরকার। এক্ষেত্রে ফাঁসুড়েকে আনা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মেরঠ থেকে। ফাঁসির আগে তিহাড় জেলের এক আধিকারিক জানান, ‘আমরা গত ডিসেম্বরেই ফাঁসির মঞ্চ পরিদর্শন করি। তিহাড় জেলের আধিকারিকদের সঙ্গে পরিদর্শনে যান পূর্ত দফতরের এক এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র। ফাঁসির আগের সন্ধেয় ফের পরিদর্শন করা হয়। সাজাপ্রাপ্তদের ওজনের দেড় গুণ বেশি ওজনের বালির বস্তা দিয়ে ফাঁসির দড়ির শক্তিও পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য আরও দড়ি রাখা হয়।’