নয়াদিল্লি: তিন তিনবার পিছিয়েছে ফাঁসির দিন। অবশেষে আজ ভোরে হয়ে গেল নির্ভয়ার ৪ ধর্ষকের ফাঁসি। কীভাবে নির্ভয়ার ৪ ধর্ষক কাটাল জীবনের শেষ রাত? জেনে নিন।


সারা রাত ঘুমোতে পারেনি মুকেশ সিংহ, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্ত। ক্ষীণ আশা ছিল, যদি গভীর রাতের শুনানিতে মৃত্যুদণ্ড রদ করে আদালত।  জেল কর্মীরা তাদের তাড়াতাড়ি ঘুমোতে বললেও ঘুমোয়নি একজনও। আদালতে আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় ভোর সোয়া তিনটের সময় তাদের সেলে আসেন তিহারের আধিকারিকরা। ফাঁসি ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের স্নান করতে বলা হয়। তাতে রাজি হয়নি কেউ। ভোর চারটেয় জেলে পৌঁছন ডিজি সন্দীপ গোয়েল। জেল নম্বর তিনে ততক্ষণে এসে গিয়েছেন পবন জল্লাদ। ডেপুটি সুপারের ঘর থেকে নিয়ে আসা হয় ফাঁসির জন্য তৈরি দড়ি।

শেষ ইচ্ছেমতো দোষীদের বলা হয় অন্তিম পুজোপাঠ করে নিতে। পুজোর জন্য একজন পুরোহিত নিয়ে আসে জেল প্রশাসন। কিন্তু রাজি হয়নি তারা। এরপর তাদের বলা হয় চা জলখাবার খেতে। অন্যরা সামান্য খেলেও একজন মুখে তোলেনি কিছু। এর মধ্যে পবন জল্লাদ ফাঁসি ঘরে বেঁধে ফেলেন দড়ি। তিহার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আসামীরা এরপর অদ্ভুতভাবে পাগলামি করতে থাকে, পুলিশকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করে তারা।

তিহারে আসেন পশ্চিম দিল্লির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ৪ অপরাধীর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয় তাদের শেষ ইচ্ছা। জানা যাচ্ছে, ২ জন তখনও নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে, তবে কেউ কোনও শেষ ইচ্ছার কথা বলেনি। এরপর জেলের চিকিৎসক প্রত্যেকের আলাদা আলাদা করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। জল্লাদও অন্যান্য আধিকারিকরা পৌঁছে যান জেলের কালোকুঠুরিতে। ফাঁসি ঘরে যাওয়ার পথে একজন নাকি মেঝেয় শুয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে গিয়ে চারজনের মাথা কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়। জেল কর্মীদের সাহায্যে পিছমোড়া করে বাঁধা হয় তাদের হাত। বলা হয়, চাইলে যে কোনও ধর্মগুরুকে তাদের অন্তিম সময়ে হাজির করা যেতে পারে। কিন্তু তারা তাতে রাজি হয়নি।

ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটায় এক সঙ্গে হয় ৪ জনের ফাঁসি। জেল সুপারিনটেন্ডেন্ট হাত নাড়িয়ে ইশারা করার পর পরপর চারজনের ফাঁসির লিভার টানেন পবন জল্লাদ। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম এক সঙ্গে ৪ জনের ফাঁসি হল। আধঘণ্টা ওভাবেই ঝুলিয়ে রাখার পর তুলে আনা হয় দেহ। এরপর জেলের চিকিৎসক দেহ পরীক্ষা করে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয় দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে। ৭ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ে এভাবেই ইতি পড়ে।