নয়াদিল্লি: সাধারণ মানুষকে ইথানল মেশানো জ্বালানি ব্যবহারে বাধ্য করে, ছেলের সংস্থাকে মুনাফা পাইয়ে দিয়েছেন বলে লাগাতার অভিযোগ উঠছে। সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। তাঁর দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিছু রাজনৈতিক মদতপুষ্ট লোকজন, টাকার বিনিময়ে এই কাজ করছে বলেও দাবি করলেন তিনি। (Nitin Gadkari)
দিল্লিতে সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন নিতিন। সেখানে তিনি বলেন, “ARAI এবং সুপ্রিম কোর্ট E20 নিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে নিশানা করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে প্রচার। একদম গুরুত্ব দেবেন না।” (E20 Petrol Row)
তবে ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি নিয়ে বিতর্ক থামছে না। পেট্রোলের পরিবর্তে ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি ব্য়বহারে গাড়ির ক্ষতি যেমন হচ্ছে, তেমনই জ্বালানি বাবদ প্রচুর টাকাও খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। ইথানল মিশ্রিত জ্বালানিতে যাতে গাড়ির ক্ষতি না হয়, আগে সেই ব্যবস্থা না করে কেন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হল প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এমনকি ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, নিতিনের ছেলেরা ফুলেফেঁপে উঠছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতা পবন খেরাকে বলতে শোনা যায়, “নরেন্দ্র মোদি ভোট চুরি করছেন, আর তাঁর ভাইপোরা নোট চুরি করছেন।” পবন দাবি করেন, ২০১৪ সাল থেকে ইথানল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সওয়াল করে আসছেন নিতিন। কাঠ থেকে তৈরি ইথানল মিশ্রিত জ্বালানির বিক্রি বাড়লে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ৫৫ এবং ৫০ টাকায় নেমে আসবে বলে দাবিও করেন। কিন্তু হিসেব বলছে, যে ৬৭২ কোটি লিটার ইথানল উৎপন্ন করা হয়েছে, তার ৫৬.৭৫ শতাংশ আখগাছ থেকে তৈরি হয়, বাকি ৩৮.০৮ শতাংশ তৈরি হয় খাদ্যশস্য থেকে।
আখ থেকে ইথানল তৈরির নেপথ্যে নিতিনের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলেও দাবি করেন পবন। তিনি বলেন, “আখ থেকে তৈরি ইথানল নিয়ে এত প্রচার কেন? কারণ মহারাষ্ট্রের চিনিকলগুলির সঙ্গে গডকড়ী, তাঁর সহযোগী এবং RSS-এর লোকেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। বাবা নীতি তৈরি করছেন, ছেলেরা টাকা করছে।” পবন জানান, নিতিনের এক ছেলে নিখিল গড়কড়ীর সংস্থা Cian Agro Industries এবং আর এক ছেলে, সারং গডকড়ী যে সংস্থার ডিরেক্টর, সেই Mansa Agro Industries ইথানল সরবরাহ করে।
নিতিনের ছেলের সংস্থার মুনাফাও তুলে ধরেন পবন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুন মাসে Cian Agro-র মুনাফা ছিল ১৮ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুন মাসে তা বেড়ে একধাক্কায় ৫২৩ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংস্থার শেয়ারের দর ছিল ৩৭.৪৫ টাকা, অগাস্ট মাসে তাতে ২১৮৪% বৃদ্ধি চোখে পড়েছে। একধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৬৩৮ টাকা। সাধারণ মানুষের মজুরি বাড়েনি, বরং কমেছে। অথচ Cian Agro-র বৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না।”
যে ইথানলকে ঘিরে বিতর্ক, সেটি আসলে এক ধরনের জৈব-জ্বালানি। আখ পচিয়ে, ইথাইলিন হাইড্রেশন প্রক্রিয়ায় সেটি তৈরি করা হয়। এক লিটার ইথানল তৈরি করতে ২৮৬০ লিটার জলের প্রয়োজন পড়ে। দূষণ কম হয় বলে ২০০১ সাল থেকেই পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর দিকে এগোয় ভারত। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই হার ১.৫ শতাংশ থাকলেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে ২০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে।
এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। পবন বলেন, “E-20 নিয়ে এত প্রচার, তা কি সত্য়িই জনকল্যাণে, নাকি ”গডকড়ীর ছেলে ও তাঁদের সংস্থার কল্যাণে? মোদিজি দুর্নীতির সঙ্গে আপস না করার কথা বলেন। তাহলে কি গড়কড়ীর ছেলেদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে লোকপাল?” ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহার করায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেন পবন। তিনি বলেন, “গাড়ি আরও বেশি জ্বালানি খাচ্ছে, তাড়াতাড়ি খারাপ হচ্ছে, এক লিটার ইথানল তৈরি করতে ৩০০০ লিটার জল খরচ হচ্ছে, ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ু কমে যাচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়ছে।” শুধু কংগ্রেস বা বিরোধী শিবিরের লোকজনই নন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সেই আবহেই মুখ খুললেন নিতিন।