নয়াদিল্লি: রাতভর অভিযান চালিয়ে কার্যত খুঁড়ে ফেলা হয়েছে গাজা। শনিবারও দিনভর সামরিক অভিযান চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। সেই আবহেও এখনও গাজায় মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন নিরীহ নাগরিকরা (Israel Palestine Conflict)। কিন্তু কতক্ষণ ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকবেন, ধন্দে রয়েছেন নিজেরাই। কারণ বিদ্যুৎ পরিষেবা আগেই বন্ধ করে দিয়েছে ইজরায়েল। টান ধরতে শুরু করেছে পেটেও। বাড়িতে মজুত করা খাবার-দাবার ফুরিয়ে গিয়েছে আগেই। দোকান বাজারেও ফুরিয়ে আসছে পাউরুটি। পানীয় জলের সরবরাহও বন্ধ। তাই বোমা-গুলি থেকে বাঁচলেও, অনাহারে না মরতে হয়, সেই চিন্তাই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁদের। (Israel Palestine War)


শুক্রবার গাজার উত্তরের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইজরায়েল সরকার। ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, তার পরই ওই এলাকা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর দলে দলে মানুষজন দক্ষিণের অংশে এসে উঠেছেন। তাতে খাবার-দাবারের চাহিদা বাড়লেও, জোগানে টান পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে একদিকে মুহুর্মুহু বোমাবাজি, আর অন্য দিকে মাথা বাঁচিয়ে দোকানের বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মানুষকে। কিনম্তু দোকানের সামনে পৌঁছনোর আগেই খালিহাতে ফিরে আসতে হয় বহু মানুষকে। কারণ ততক্ষণে পাউরুটি সব শেষ হয়ে গিয়েছে।


আবার বহু মানুষ গাজা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন যেমন, অনেকে এখনও মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। যাঁরা বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা নিরাপদে এগোতে পারলেন কিনা, সেই খোঁজ খবরও নিতে পারছেন না থেকে যাওয়া লোকজন। কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়, চার্জ দিতে পারেননি মোবাইল ফোনে। সব বন্ধ পড়ে রয়েছে। তাই প্রিয়জন আদৌ বেঁচে রয়েছেন কিনা, কোনও বিপদ হল কিনা, তা জানারও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।


আরও পড়ুন: Israel Palestine War: প্রকাশ্যে শত্রুতা, আড়ালে সমর্থন হামাসকে, নেতানইয়াহুই কি যুদ্ধ ডেকে আনলেন? প্রশ্ন ইজরায়েলেই


সব মিলিয়ে গাজায় ২৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকলকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব নয়, কোনও ভাবেই সকলকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। তার পরও ইজরায়েল সুর নরম করেনি। বরং গাজাকে চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। খাবার, বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। একই ভাবে, গাজার বাসিন্দাদের অনেকেও মাটি ছেড়ে নড়েননি। এমনিতেই বছরের পর বছর মরণশীল অবস্থায় বেঁচে রয়েছেন, তাই মৃত্যুভয় আর নেই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন তাঁরা। 


সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "চাল, আটা, ডিম, যা পাওয়া যায়, তার খোঁজে বেরিয়েছিলাম। বাচ্চার জন্য দুধ খুঁজছিলাম। কিন্তু কিচ্ছু পেলাম না। এভাবে আমাদের সঙ্গে লড়ছে ইজরায়েল। আমাদের বাচ্চাদের অনাহারে রেখে মারছে। হয় বোমা মেরে, না হয় ভাতে মেরে আমাদের শেষ করে দিতে চাইছে।"


প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে গাজার উত্তরে ৭০ জন সাধারণ মানুষ মারা গিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০০। গাড়িতে চেপে পালাচ্ছিলেন যাঁরা, তাঁদের উপরও বোমা ফেলেছে ইজরায়েলি সেনা। গত শনিবার থেকে এখনও পর্যন্ত দুই তরফে যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে ৩ হাজার ২০০ জনের। আহতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।