নয়াদিল্লি: গদ্য মানে সরল বাক্যে কথা ফুটিয়ে তোলাকেই বোঝায়। কিন্তু গদ্যের সহজ-সরল ভাষার সঙ্গে ছন্দ গেঁথে কাব্যিক গদ্য রচনা করেন তিনি। তাঁর রচনায় জায়গায় পায় ইতিহাস, ইতিহাসের ক্ষত এবং ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনের বিভিন্ন দিক। ৫৩ বছর বয়সে নিজর সৃষ্টির জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার পেলেন হান কাং। ২০২৪ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার এই সাহিত্যিক। গভীর কাব্যিক গদ্যের জন্য সাহিত্যের সেরা সম্মানে ভূষিত করা হল তাঁকে। 


'দ্য ভেজেটেরিয়ান' এবং 'হিউম্যান অ্যাক্টস' উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হলেন হান কাং। সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সম্পাদক ম্যাটস মালম নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে হান কাংয়ের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, "ফোনে হান কাংয়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি আমি। আর পাঁচটা দিনের মতোই দিন কাটছিল তাঁর। ছেলের সঙ্গে সবে নৈশভোজ সেরে উঠেছিলেন। এই খবরের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। আমরা ডিসেম্বরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।" এ বছর ডিসেম্বর মাসে হান কাংয়ের হাতে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। 


'দ্য ভেজিটেরিয়ান' উপন্যাসে হান কাং লেখেন, 'জীবন বড়ই অদ্ভুত, ভাবল সে, হাসিয়ে থামতেই এই ভাবনা এল। যদিও অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে তাদের সঙ্গে, সেই অভিজ্ঞতা যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, তার পরও মানুষ খাবার খায়, পানীয় ঢালে গলায়, শৌচালয়ে যায়, স্নান করে, এককথায় জীবনযাপন চালিয়ে যায়। কখনও কখনও জোরে হেসেও ওঠে। একই ভাবনা হয়ত তাদের মাথাতেও আসে। সেই সময় হয়ত সমস্ত দুঃখের স্মৃতি আবার ফিরে আসে, যা কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকতে পেরেছিল'।



'হিউম্যান অ্যাক্টস' উপন্যাসে হান কাং লেখেন, 'মৌলিক ভাবে মানুষ কি সত্যিই নিষ্ঠুর? প্রজাতি হিসেবে নিষ্ঠুরতাই কি একমাত্র অভিজ্ঞতা, যা আমরাদের মিলিয়ে দেয়? যে মর্যাদা আঁকড়ে পড়ে থাকি আমরা, তা কি আত্মবিভ্রম ব্যাতীত কিছু নয়? একটা মুখোশ যা আমাদের একমাত্র সত্য থেকে দূরে রাখে: যে আমরা প্রত্যেকেই পতঙ্গ, হিংস্র জন্তু, মাংসের পিণ্ডে পরিণত হতে পারি যে কোনও মুহূর্তে। অধঃপতন, নিধন- মানবজাতির জন্য কি অপরিহার্য, ইতিহাস কি একে অনিবার্য বলে চিহ্নিত করেছে'?


গদ্য, উপন্যাস, ছোট গল্পের জন্য পরিচিত হান কাং। তাঁর বাবাও পেশায় সাহিত্যিক। পিতৃতন্ত্র, নৃশংসতা, শোক, মানবতার বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে হান কাংয়ের লেখায়। ২০০৭ সালে তাঁর লেখা 'দ্য ভেজিটেরিয়ান' উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে সেটি অনুবাদ করেন ডেবারো স্মিথ। এর পর ২০১৬ সালে সেই উপন্যাসটি ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পায়। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই প্রথম কেউ নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন। সবমিলিয়ে এই নিয়ে ১৮ জন মহিলা সাহিত্যে নোবেল পেলেন। 


হান কাংয়ের প্রশংসা করে নোবেল কমিটির চেয়ারে আসীন আন্দার্স ওলসন বলেন, "দুর্বল, বিশেষ করে মহিলাদের প্রতি ওঁর যে সহানুভূতি, জীবনের স্পর্শগ্রাহ্য দিকগুলি বিভিন্ন রূপকের মাধ্যমে যেভাবে গদ্যে ফুটিয়ে তোলেন তিনি, তা অভিনব।  শরীর ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যে অদ্ভুত এক সংযোগ ফুটিয়ে তোলেন উনি। কাব্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গদ্যের নতুন ধারার সূচনা ঘটিয়েছেন হান কাং।"


১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংঝু শহরে জন্ম হান কাংয়ের। ১৯৯৩ সালে সাহিত্য পত্রিকায় প্রথম পাঁচটি কবিতার সিরিজ প্রকাশিত হয়। পরের বছর 'রেড অ্যাঙ্কর' নামের গল্পের জন্য সাহিত্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় হান কাংয়ের গল্পসমগ্র 'লাভ অফ ইয়োসু'। ১৯৯৮ সালে সরকারি সহযোগিতায় ইউনিভার্সিটি ওফ আইওয়ার লেখালেখির কর্মসূচিতে অংশ নেন। 'দ্য ভেজিটেরিয়ান'ই হান কাংয়ের লেখা প্রথমন উপন্যাস, যেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। অনুবাদের ধরন নিয়ে যদিও সমালোচনা হয়, কিন্তু ওই উপন্যাস আন্তর্জাতিক পরিচিতি দেয় হান কাং-কে। 


২০২৫ সালে হান কাংয়ের 'উই ডু নট পার্ট' উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার কথা। উপন্যাসটির ফরাসি অনুবাদটি ২০২৩ সালে 'Prix Medicis Etranger' পুরস্কার পায়।  ২০১২ সাল থেকে এক বছর পুরুষ এবং এক বছর নারীরা নোবেল পুরস্কার পেয়ে আসছেন। হান কাংয়ের জয়ে সেই ধারাই অব্যাহত রইল। যুগ্মভআবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা বিরল যদিও, তবে ১৯০৪, ১৯১৭, ১৯৬৬ এবং ১৯৭৪ সালে তা ঘটে। বিশ্বযুদ্ধের সময় নোবেল শান্তি পুরস্কার বন্ধ ছিল।  ১৯৫৮ সালে রাশিয়ার বরিস প্যাস্টারন্যাক 'ডক্টর জিভাগো'র জন্য নোবেল পেয়েও প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৬৪ সালে ফ্রান্সের জঁ-পল সারত্রে নোবেল প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯০৭ সালে সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী হিসেবে সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান পান ব্রিটেনের রুডিয়ার্ড কিপলিং। 'দ্য জঙ্গল বুকে'র জন্য পুরস্কৃত হন। ৮৭ বছর বয়সে ৮৭ বছর বয়সে নোবেল পান ব্রিটেনের ডরিস লেসিং। 


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI