কলকাতা: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যে পুস্তিকা বিলি করছে, তাতে নতুন নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণের পরই জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। ২৩ পৃষ্ঠার ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলায় প্রকাশিত পুস্তিকায় কেন্দ্র দেশব্যাপী এনআরসি করতে চায় বলে উল্লেখ রয়েছে।
দেশব্যাপী সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিরোধী দলগুলি, ছাত্র ও যুবসমাজ সহ নানা মহল যে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চালাচ্ছে, তার পাল্টা এই দুই উদ্যোগের ব্যাপারে প্রচার, জনমত তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ঘরে ঘরে প্রচার-পুস্তিকা বিলি। বিজেপি সূত্রে খবর, পুস্তিকায় সিএএ নিয়ে আশঙ্কা, উদ্বেগ নিরসনে সহজে প্রশ্নোত্তরে আইনটি বোঝানো হয়েছে।
সেখানে একটি প্রশ্ন রয়েছে, এরপর কি এনআরসি হবে? এর প্রয়োজনই বা কতটা? আর সত্যিই এনআরসি হলে হিন্দুদের কি অসমের মতোই ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে? উত্তরে বলা হয়েছে, হ্যাঁ, এরপর এনআরসি হবে, অন্তত তেমনটাই উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের।
প্রসঙ্গত, অসমের পর বাকি দেশে এনআরসি হবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা, উদ্বেগ, আতঙ্কের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এমনকী বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বও জানান, এনআরসির ব্যাপারে কোনও আলোচনাই হয়নি। যদিও অতীতে বেশ কয়েকবার স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সারা দেশে এনআরসি হচ্ছে, ধরে নেওয়ার কথা বলেছেন। এবার বিজেপির পুস্তিকাতেও সিএএ কার্যকর হওয়ার পর এনআরসির ইঙ্গিত দেওয়া হল। পুস্তিকায় বলা হয়েছে, অসম, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২ কোটি অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে বলে শোনা যাচ্ছে। এদের ডি-ভোটার হিসাবে চিহ্নিত করা, তালিকায় ফেলা জরুরি। দেশে অনুপ্রবেশ সমস্যা যে কতটা ব্যাপক, ভয়াবহ, এ তারই প্রতিফলন। এজন্যই সারা দেশে এনআরসি হওয়া দরকার।
অসমের হিন্দুদের এনআরসি নয়, বিদেশি আইনের জেরে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে পুস্তিকায়। বলা হয়েছে, অসমে এনআরসি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং ফরেনার্স অ্যাক্ট পাশ করেছিল কংগ্রেস সরকার। অসমের বিজেপি সরকার এনআরসি আনেনি, বরং তার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ হওয়ার পর অসমে ডিটেনশন সেন্টারে আটক হিন্দুরা ছাড়া পাবেন বলে জানানো হয়েছে পুস্তিকায়।
এদিকে বিজেপির পুস্তিকার দাবি খারিজ করে ‘ঝোলা থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ল’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। বলেছে, বিজেপি সত্যি কী চায়, পরিষ্কার। আমরা বলে আসছি, এনআরসি নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। রাজ্য ও দেশের মানুষ তাঁদের উপযুক্ত জবাব দেবেন।