নয়াদিল্লি: হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল হয়েছিল বিস্তর। নীরবতাকে ঢাল করেই সেই ঝড় সামলে উঠেছিল আদানি গোষ্ঠী  (OCCRP Report)। কিন্তু আবারও প্রশ্নের মুখে শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং তাঁর সংস্থা। এবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আনল অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট  (OCCRP). অস্বচ্ছ উপায়ে মরিশাস থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। (Adani Group) 


আন্তর্জাতিক তদন্তমূলক সংগঠন OCCRP আদানি গোষ্ঠীর লেনদেন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, শেয়ার বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে মরিশাস থেকে আসা অস্বচ্ছ বিনিয়োগের টাকা ব্যবহার করেছে আদানি গোষ্ঠী। আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং ব্যবসায়িক সহযোগীরাই এই লেনদেনে যুক্ত ছিলেন। ঘুরপথে টাকা বিনিয়োগ করে তাঁদের পরিচয় আড়াল করা হয়। 


OCCRP জানিয়েছে, এমন দু'-দু'টি ঘটনার প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা বিদেশের ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনে আবার বিক্রিও করে দেওয়া হয়। ইমেল মারফত আদানি গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ কথোপকথনেও এর উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। বলা হয়েছে, মরিশাসের মতো করফাঁকির স্বর্গরাজ্যগুলিতে এমন একাধিক ভুয়ো সংস্থার শরণাপন্ন হয় আদানি গোষ্ঠী। ওই সমস্ত সংস্থার মাধ্যমে রহস্যজনক ব্য়ক্তিরা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন, আবার সময় মতো তা বিক্রিও করে দিতেন। 


আরও পড়ুন: India GDP Growth: GDP নিয়ে সুখবর! এই ত্রৈমাসিকে রেকর্ড বৃদ্ধির ইঙ্গিত


এ ব্যাপারে নাসের আলি শাবান আহিল এবং চাং চুং-লিং নামের দুই ব্যক্তির নাম সামনে আনা হয়েছে। OCCRP-র দাবি, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে আদানিদের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। গৌতম আদানির দাদা, বিনোদ আদানির দীর্ঘ দিনের সহযোগী তাঁরা। আদানি গোষ্ঠীর শাখা সংস্থার ডিরেক্টর এবং শেয়ার হোল্ডারও ছিলেন তাঁরা। ২০১৩ সাল থেকে আদানি গোষ্ঠীতে এঁদের বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।


OCCRP জানিয়েছে, আহিল এবং লিং যদি আদানিদের প্রোমোটার হন, সেক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর মোট শেয়ারের ৭৫ শতাংশের বেশি তাদের নিজেদের লোকেদের হাতেই রয়েছে, যা বাজার সংক্রান্ত আইনের পরিপন্থী। আদানি পরিবারের টাকাই ঘুরপথে আহিল এবং লিংয়ের হাত ধরে শেয়ার কেনাবেচায় ঢুকছিল কিনা, তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ না থাকলেও, আদানি পরিবারের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করেই আহিল এবং লিং শেয়ারে টাকা ঢালছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে এবং তার সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।


মরিশাসের কিছু ভুয়ো সংস্থা মারফত আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগের বিষয়টি এর আগে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চেও উঠে এসেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিনোদের সহযোগীরা বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে কৃত্রিম ভাবে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর বাড়িয়ে দেন। এই ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলিও আদানিদের সহযোগীদেরই তৈরি, যাতে ঘুরপথে আদানিদের টাকা, তাদেরই শেয়ারে লগ্নি করা যায় এবং বাজারে শেয়ারের দর বাড়ানো যায়। 


OCCRP-র তরফেও এবার একই দাবি করা হল। আরও স্পষ্ট ভাবে দু'জন রহস্যজনক বিনিয়োগকারীর নামও প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও আদানিরা বরাবরের মতোই এই রিপোর্টটিকেও গুরুত্ব দিতে নারাজ। একই অভিযোগ নতুন মোড়কে পেশ করা হচ্ছে বলে পাল্টা দাবি করেছে তারা। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কিছু মানুষ আদানি গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। যে OCCRP সংস্থা এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেটি ব্যবসায়ী তথা সমাজকর্মী জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন এবং রকেফেলার ব্রাদার্সের অনুদানে চলে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টেও সোরোস-যোগ ছিল। সোরোস বরাবরই আদানিদের সমালোচকর হিসেবে পরিচিত। তাই তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আদানিরা।