কলকাতা: বালেশ্বরে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ায় এখনও পর্যন্ত ২৯৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহতের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। পরিচয়হীন মৃতদেহের স্তূপ জমছে অস্থায়ী মর্গে। প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বহু মানুষ (Odisha Train Accident)। সেই আবহে দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। বরং রেলের পরিকাঠামোয় যে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে, আগেই সেই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। 


পয়েন্ট বিভ্রাটের জেরেই বালেশ্বরের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ইতিমধ্যেই দাবি সামনে এসেছে। মেন লাইনে সিগনাল থাকা সত্ত্বেও, দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে লুপ লাইনে ঢোকানো হল কেন, রেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র 'কবচ' ছিল না কেন, এমন একাধিক প্রশ্ন উঠছে। তাই রেলের পরিকাঠামো তো বটেই, লোকো পাইলটদের বাড়তি খাটিয়ে নেওয়ার নীতি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন (Indian Railways)। 


রেলের কর্মীসংখ্যায় যে ঘাটতি রয়েছে, এর আগে সংসদে তা মেনে নেন খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। শূন্যপদ পূরণে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় রেলের তরফে, তার বাইরেও কয়েক লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। রেলের তরফে ট্রেনচালকদের বাড়তি সময় পরিশ্রমে বাধ্য করার বিষয়টিও সামনে আসে আগেই। যত দ্রুত সম্ভব আরও চালক নিয়োগ করতে কিছু দিন আগেও রেলওয়ে বোর্ডের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়। 


আরও পড়ুন: Odisha Train Accident: গোড়াতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন নীতীশ-মুকুলরা, ৯৩ বছরের রেওয়াজে ইতি টানে মোদি সরকার, ২০১৭ সালে উঠে যায় পৃথক রেল বাজেট


ট্রেনচালকের বর্তমান সংখ্যা দিয়ে সঙ্কুলান হচ্ছে না, ফলে বাকিদের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে বলে সম্প্রতি জানায় রেলের বোর্ড। জানানো হয়, যথেষ্ট সংখ্যক ট্রেনচালক না থাকায়, পাইলটদের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও ডিউটি করতে হচ্ছে। কখনও কখনও ১২ ঘণ্টা একটানা ডিউটি করে যেতে হচ্ছে তাঁদের, যা নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ নিয়ম-কানুন ধরলে ১২ ঘন্টা বা তার বেশি সময় কাজ করানো মোটেই কাম্য নয়। 


রেল বোর্ড জানায়, কিন্তু রেলেরও উপায় নেই। কর্মীসংখ্যা কম হওয়ায় বিভিন্ন জোনালে লোকো পাইলটদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ঢের বেশি ক্ষণ কাজ করাতে হচ্ছে। এ বছর মার্চ-এপ্রিল এবং মে-র প্রথম ১৫ দিনের হিসেব ধরলে, দক্ষিণ-পূর্ব সেন্ট্রাল রেলে লোকো পাইলটদের ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়েছে যথআক্রমে ৩৫.৯৯, ৩৪.৫৩ এবং ৩৩.২৬ শতাংশ হারে।  


এপ্রিল মাসে এ নিয়ে দক্ষিণ রেলের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে অভিযোগও জানায় অল ইন্ডিয়া লোকো রানিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন। শুধুমাত্র দক্ষিণ রেলের বিভিন্ন বিভাগেই ৩৯২টি লোকো পাইলটের পদ খালি পড়ে রয়েছে বলে জানানো হয়। শুধু তাই নয়, অতিমারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা গেলেও, লোকো পাইলটদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়নি, তাঁরা প্রাপ্য ছুটি পাননি, বিশ্রামের সময় পাননি বলেও জানানো হয় অভিযোগ। এতে লোকো পাইলটরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন, অত্যন্ত মানসিক চাপ নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে, যাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি বাড়ছে বই কমছে না বলে দাবি করে সংগঠন।


সংগঠনের তরফে জানানো হয়, প্রতিদিনই ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে লোকো পাইলটদের।না বিশ্রামের সময় মিলছে, না মিলছে প্রাপ্য ছুটি। নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখেই অন্তত দ্রুত শূন্যপদ পূরণ করা উচিত বলে দাবি জানায় অল ইন্ডিয়া লোকো রানিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন।