কলকাতা: পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়তে পারে বলে জোরাল জল্পনা চলছে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লেই কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় যুক্তি দেয় যে, এই দাম বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর নির্ভর করে।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থাগুলি তেলের দাম নির্ধারণ করে। এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু, অনেকেরই পাল্টা প্রশ্ন, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম বাড়লে যখন দেশে দাম বাড়ে, তেমনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে, কেন ভারতে সবসময় কমানো হয় না? সরকারের যদি তেলের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকে, তাহলে ভোট এলেই হঠাৎ করে কীভাবে দাম বাড়া বন্ধ হয়ে যায়, আর ভোট মিটলেই বাড়তে শুরু করে?
ইউপিএ আমলে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, ২০০৮ সালে বিশ্ববাজারে ব্যারেল পিছু অপরিশোধিত তেলের দাম ১৩২ ডলারে পৌঁছেছিল। তখন ভারতে লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ছিল ৫০ টাকা। মোদি জমানায়, ২০২১ সালের অক্টোবরে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৮২ ডলার প্রতি ব্যারেল। অথচ পেট্রোলের দাম ছিল লিটার পিছু ১১০ টাকা। মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদির জমানায়, অপরিশোধিত তেলের দর কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও, পেট্রোল-ডিজেলের দামে বিস্তর ফারাকের নজিরও দেখা গেছে। মনমোহন সিংয়ের জমানায় ২০০৭ সালের এপ্রিলে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৬৫ ডলার। তখন লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ৪২ টাকা ও লিটার পিছু ডিজেলের দাম ৩০ টাকা ছিল।
আর মোদি জমানায় ২০২১’এর মার্চে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৬৪ ডলার প্রতি ব্যারেল। অথচ ভারতে লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ছিল ৯১ টাকা। আর লিটার পিছু ডিজেলের দাম ছিল ৮১ টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, মোদি জমানায় অপরিশোধিত তেলের দাম যখন তলানিতে চলে এসেছে, তখনও পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমেনি। ২০১৬’র জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেলের দর ২৮ ডলারে নেমেছিল। তখন পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৫৯ টাকা আর ডিজেল লিটার প্রতি ৪৪ টাকা। ২০২০’র এপ্রিলে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম আরও কমে ২০ ডলারে নেমে আসে। অথচ, তখন লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ছিল ৭০ টাকা আর লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ৬২ টাকা।
এখন রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ ঘিরে এমনিতেই তেলের বাজার চড়া....আর তাই দাম বাড়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। তবে, বিরোধীদের প্রশ্ন, এরপরও কি বলা যায়, যে ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম শুধুই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর নির্ভর করে? শুধুই কি যুদ্ধ দাম বাড়ার জন্য দায়ী হবে, না কি রাজনীতিও?
সিপিএমএর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়বে।" তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, "ও তো এবার বাড়িয়ে দেবে। যুদ্ধের দোহাই দিয়ে এবার বাড়িয়ে দেবে।" শেষমেশ কী হবে, সেই ভেবে এখন আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ।