নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত পর্বে সম্পত্তিহানি হয়েছে ভারতের। ক্ষতি হয়েছে ভারতের যুদ্ধবিমানেরও। Operation Sindoor চালাতে গিয়ে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ না করলেও, যুদ্ধবিমান হারানোর কথা এই প্রথম স্বীকার করল ভারতীয় সেনা। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত যে পরমাণু যুদ্ধের ধারেকাছেও পৌঁছয়নি, তা আবারও বুঝিয়ে দেওয়া হল। (India-Pakistan Conflict)
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানে যে Operation Sindoor অভিযান চালায় ভারত, সেই নিয়ে নানা দিক থেকে নানা দাবি সামনে আসে। পাকিস্তানের তরফে প্রত্যাঘাতে ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমানও ভেঙে পড়েছে বলে জানা যায়। এতদিন সেই নিয়ে কোনও মন্তব্য না করা হলেও, শনিবার যুদ্ধবিমান হারানোর কথা মেনে নিলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ, জেনারেল অনিল চৌহান। (Operation Sindoor)
সিঙ্গাপুরে Shangri-La সম্মেলনে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা মেনে নেন জেনারেল চৌহান। এমনকি তাঁদের তরফে যে কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল, তাও মেনে নেন। Bloomberg TV-র তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, "একটা প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের যুদ্ধবিমান নামিয়েছে, একটি বা তার বেশি। সেটা কি সত্য?" উত্তরে জেনারেল চৌহান বলেন, "ক'টা বিমান নামানো হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন নামানো গেল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।" এর আগে, পাকিস্তান জানিয়েছিল, তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে। ছয়টি যুদ্ধবিমান হারানোর কথা যদিও অস্বীকার করেন জেনারেল চৌহান। আসল সংখ্যাও খোলসা করেননি তিনি। ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, "ওরা বলছে কমপক্ষে একটি বিমান তো নামিয়েইছে!" এতে জেনারেল চৌহান বলেন, "হ্যাঁ, কিন্তু কেন নামতে পারল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।" (Chief of Defence Staff Anil Chauhan)
জেনারেল চৌহানকে বলতে শোনা যায়, "কেন বিমানগুলি নামানো গেল, কোথায় ভুলভ্রান্তি ছিল, তা দেখাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। একটা ভাল দিক হল, নিজেদের কৌশলগত ভুলভ্রান্তি বুঝতে সক্ষম হয়েছি আমরা। সেগুলো শুধরে নিয়েছি এবং দু'দিন পর নতুন করে নেমেছি। আবারও আমাদের যুদ্ধবিমান উড়িয়েছি, অনেক দূর থেকে আঘাত হেনেছি।"
পহেলগাওঁয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে ঢুকে সামরিক অভিযান চালায়। Operation Sindoor-এর আওতায় পর পর জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে সেখানে। সেই ঘোষণার পর পরই একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যমের তরফে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার খবর সামনে আসে। পাকিস্তানের তরফেও ভারতের যুদ্ধবিমান নামানোর দাবি করা হয়। Operation Sindoor নিয়ে তিন বাহিনী যে সাংবাদিক বৈঠক করে, সেখানেও বিষয়টি ওঠে। কিন্তু সেনা আধিকারিকরা সেই প্রশ্নের জবাব দেননি।
এর পর গত কয়েক দিনে ভারতের যুদ্ধবিমান হারানোর প্রশ্নে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। Operation Sindoor নিয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরার দাবি তোলেন বিরোধীরাও। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী পর্যন্ত জানতে চান, ভারত কয়টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। সেই নিয়ে রাহুলকে যদিও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু এবার সেনা আধিকারিক নিজেই যুদ্ধবিমান হারানোর কথা জানালেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে বলে এই প্রথম ভারতের তরফে সরাসরি কোনও মন্তব্য করা হল। এর আগে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দাবি করেন, তাঁদের সেনা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান নামিয়েছে। ভারত সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে একদিন আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ বাঁধতে পারত বলে দাবি করেন। জেনারেল চৌহানকে সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, "পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা সবসময়ই খোলা ছিল। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অন্য দিক থেকেই সমস্যা আসছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ ছাড়াও অন্য অনেক রাস্তা খোলা ছিল। সেই সীমা অতিক্রম করার আগেও অনেক বিষয় থাকে, তেমন কিছু ঘটেনি বলেই জানি।"
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশই পরিণত মানসিকতার প্রমাণ দেয় বলেও জানান জেনারেল চৌহান বলেন, "অপারেশনের সময় আমার মনে হয়েছিল দুই পক্ষের ভাবনা এবং পদক্ষেপেই যথেষ্ট বিচার বিবেচনা ছিল। তাই দুমদাম পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের যুক্তি এখানে খাটে না।" চিন এবং পাকিস্তান পরস্পরের সহযোগী হলেও, সংঘাত চলাকালীন দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি বলেও জানান।
সামরিক সংঘাতে পাকিস্তান যে চিনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তা যে ভারত চুরমার করে দেয়, তাতে ফের সিলমোহর দেন জেনারেল চৌহান। তিনি বলেন, "নিরাপত্তার বলয় টপকে পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার ভিতরে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সফল হই আমরা।"