লন্ডন : প্রায় দেড় বছর হতে চলল। অতিমারির প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসা তো দূর, এখনও করোনা ভাইরাস ঘিরে ত্রাহি ত্রাহি রব বিশ্বজুড়ে। ৩০ লক্ষর বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন। এহেন ভাইরাসের উৎস কোথায়, সেই তথ্য এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু, এই ভাইরাস একটি ল্যাবরেটরি থেকে লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে যে অভিযোগ সামনে এসেছিল তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যতক্ষণ না এই দাবি অক্ষরে অক্ষরে ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ ল্যাবরেটরির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এমনই দাবি তুললেন একদল নামী বিজ্ঞানী।
২০১৯ সালের শেষ লগ্নে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। প্রথম চিনে এর সন্ধান পাওয়া যায়। যার জেরে বহু মানুষের মৃত্যু, বিশ্বজুড়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতি, এমনকী স্বাভাবিক জীবনও ব্যাহত হয়েছে। এরকম একটা মারণ ভাইরাসের উৎস খুঁজতে প্রথম থেকেই মরিয়া বিভিন্ন মহল। চিনের একটি ল্যাবরেটরি থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশায়।
এপ্রসঙ্গে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট রবীন্দ্র গুপ্তা ও ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে ভাইরাসের বিবর্তন নিয়ে পড়াশোনা করা জেস ব্লুম সহ ১৮ জন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, "অতিমারির উৎস জানার জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন।"
সায়েন্স জার্নালে পাঠানো চিঠিতে স্ট্যানফোর্ডের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ডেভিড রেলম্যান বলেন, ল্যাবরেটরি থেকে দুর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে পড়া এবং প্রাণী থেকে মানবশরীরে প্রবেশ করা-দুটি তত্ত্বই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ভাইরাসের উৎস-সন্ধান নিয়ে যে তদন্ত তাতে ভারসাম্য নেই। এই দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা ।
প্রসঙ্গত, ভাইরাসের উৎস সন্ধানে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চিনের উহানে ছিল WHO-নেতৃত্বাধীন একটি দল। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই দলটি চিনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সম্ভবত বাদুড় থেকে অন্য প্রাণীর মাধ্যমে মানবশরীরে ওই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। ল্যাব থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতো কিছু দেখা যায়নি।
কিন্তু, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আছে। ওই বিজ্ঞানীদের মতে, কিছু দেশে এশিয়া-বিরোধী আবেগের মধ্যেই, এটা মনে রাখতে হবে যে অতিমারির শুরু থেকেই, চিনের চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক এবং নাগরিকরা- নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করেও-ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্ব গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন।