সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, পহেলগাঁও : ঘন জঙ্গল থেকে ধীরে সুস্থে বেরিয়ে এসে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে, ঠান্ডা মাথায় পরপর খুন । হত্যালীলার পর জঙ্গলের পথ ধরেই পালিয়ে যাওয়া।  একেবারে নিখুঁত অপারেশন। সূত্র বলছে, ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই পরিকল্পনা করে বাছা হয়েছিল পিরপঞ্জালে ঘেরা দক্ষিণ কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকাকে। ২২ তারিখের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর ২৮ তারিখে ঠিক সেই বৈসরনেই এবিপি আনন্দ-র প্রতিনিধি । যা দেখলেন, যা বুঝলেন, যা শুনলেন, তা শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত বইয়ে দেয়। 

ড্রোনের মাধ্যমে বোমা ফেলার পরিকল্পনাও ছিল?

সূত্রের খবর, হামলার আগে ৪ বার রেকি করেছিল জঙ্গিরা। ড্রোনের মাধ্যমে বোমা বিস্ফোরণের ছকও ছিল জঙ্গিদের। জানা গিয়েছে, শুধু এভাবে হিন্দু হত্যা নয়, হামলাকারীদের পরিকল্পনা ছিল আরও বড়। আরও ভয়ঙ্কর। এবিপি আনন্দর সাংবাদিক সূত্র মারফত জানলেন, আরও বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা থেকেই হয়ত বার চারেক রেকি করে ছিল হামলাকারীরা। পরিকল্পনা ছিল ড্রোনের মাধ্যমে বোমাও ফেলা হতে পারে। কিন্তু বোমা ফেললে বা গুলি চালালে, একটি সম্প্রদায়কে নির্দিষ্ট করে টার্গেট করা হত না। তাই বাতিল হয়। এরপর এভাবে পরিচয় জেনে জেনে, ধর্ম দেখে দেখে, খুন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। 

সেদিনের নিহত শৈলেশভাই হিম্মতভাই কালাথিয়ার স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'আমার অবাক লাগছে যে, ওখানে এত পর্যটক ছিল কিন্তু একজনও সেনা জওয়ান বা পুলিশ ছিল না, কেন? আর্মি ক্য়াম্পের সামনে থেকেই সবাইকে যেতে হয়েছে। তাহলে ওরা তো জানতই এত পর্যটক উপরে আছে। উপরে কোনও নিরাপত্তা নেই, কোনও পুলিশ নেই,  কোনও হাসপাতাল নেই। কোনও সাহায্য় নেই। কেন?' এই বিষয়টাকেই বোধ হয় হাতিয়ার করে ফেলেছিল হামলাকারীরা। বারবার রেকি করে তারা দেখে নিয়েছিল, পহেলগাঁও থেকে সাইট সিনের জন্য সাধারণত চারটি জায়গা রয়েছে।  বৈসরন ভ্যালি, আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, এবং চন্দনবাড়ি। সূত্রের দাবি, তার মধ্যে বৈসরনকে টার্গেট করার নেপথ্যে ছিল নিঁখুত অঙ্ক । কারণ বাকি তিনটি ট্যুরিস্ট স্পটের কাছাকাছি সেনা বা আধাসেনার ক্যাম্প বা নজরদারি থাকলেও একমাত্র বৈসরন উপত্যকাতেই সেই ব্যবস্থা নেই। বৈসরনের থেকে নিকটবর্তী CRPF-এর ক্যাম্পের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। সাড়ে ৬ কিলোমিটার দূরে পহেলগাঁও থানা। তাই যে কোনও সাহায্য আসতে বা পৌঁছতে বহু সময় লেগে যাবে। ।  তাছাড়াও রাস্তা অত্যন্ত খারাপ এবং খাঁড়া। উপরে বৈসরনে কোনও ঘটনা ঘটলে নীচ থেকে সেনা বা পুলিশের পৌঁছতে সময় লাগবে। এই সুযোগকেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা।