ইসলামাবাদ: কৌশলী সেনানায়ক নাকি কার্গিল যুদ্ধের (Kargil War) অন্যতম চক্রী? ইতিহাস কী ভাবে মনে রাখবে তাঁকে? ৭৯ বছরের প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট (Ex President Of Pakistan), জেনারেল পারভেজ মুশারফের (General Pervez Musharraf) মৃত্যুর পর ফের প্রাসঙ্গিক এই প্রশ্ন যার কেন্দ্রে অবশ্যই দুই পড়শি দেশের সম্পর্কের উত্থান-পতন।
কার্গিল যুদ্ধ ও মুশারফ ...
সালটা ১৯৯৮। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনাবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করলেন পারভেজ মুশারফকে। যদিও সেই নিয়োগ বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। শোনা যায়, দুই সিনিয়রকে টপকে ফোর স্টার জেনারেল হয়েছিলেন মুশারফ। কেন? কোন অদৃশ্য হাত ছিল তাঁর নেপথ্যে? খোঁজ করতে গেলে অনেক তত্ত্ব ও তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে আজকের মতো শুধু ওই ঘটনাকে সময়ের একটা বড় মাপকাঠি ধরে নিয়ে এগোনো যাক। কারণ, এর পরের বছরই ধুন্ধুমার বাঁধবে ভারত-পাক সীমান্তে। নাম? কার্গিল যুদ্ধ। শোনা যায়, সেই বছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত জেনারেল মুশারফের নির্দেশেই পাক সেনার নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সদস্যরা অনুপ্রবেশ করে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরের একাধিক স্ট্র্যাটেজিক পোস্ট দখল করে নেন। টের পেতেই 'অপারেশন বিজয়' শুরু করে বাজপেয়ীর ভারত। বাকিটা বেশ কিছুটা জানা। পাকিস্তানি সেনার হাত থেকে ফের অধিকৃত এলাকাগুলির দখল ছিনিয়ে নেয় ভারতীয় সেনা। কিন্তু এই যুদ্ধ কতটা জরুরি ছিল? আঙুল ওঠে জেনারেল পারভেজ মুশারফের দিকে। উপমহাদেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক মঞ্চের বড় অংশ এই যুদ্ধের মূল চিত্রনাট্যকার ও কারিগর হিসেবে দায়ী করে জেনারেল মুশারফকে।
চাপের মুখে...
তীব্র চাপের মুখে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ জেনারেল মুশারফকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন। পাল্টা চাল তৈরি ছিল। তবে এবার আর রক্তপাত নয়। বিনা বাধা ও রক্তপাতে দেশের শাসনভার দখল করে পাক সেনাবাহিনী। বিমানবন্দর ও রেডিও স্টেশনের দখল নেয় পাক সেনা। পাক সেনাপ্রধান থেকে পাকিস্তানের চিফ এগজিকিউটিভ হয়ে ওঠেন মুশারফ। মাত্র দুবছর পর বদলে যায় সেই মর্যাদাও। রফিক তারারের পদত্যাগের পর পাক প্রেসিডেন্ট হন জেনারেল মুশারফ। সালটা ২০০১। গদিতে ছিলেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক...
কার্গিল যুদ্ধের মূল চক্রী বা সেনাশাসনের মূল হোতা হিসেবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও আন্তর্জাতিক মহল সময়বিশেষে জেনারেল মুশারফের উপর আস্থার প্রমাণও রেখেছে। বিশেষত ৯/১১ হামলার পর আমেরিকা সন্ত্রাসদমনে যে সক্রিয়তা দেখাতে শুরু করে, তাতে অন্যতম জুড়িদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছিল মুশারফের পাকিস্তান। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবলিউ বুশের আমলে পাক সেনার জন্য আর্থিক সাহায্য জোগাড় করতেও যথেষ্ট তৎপর ছিলেন জেনারেল মুশারফ। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও বেশ কিছু উন্নয়নশীল অবদান ছিল তাঁর। যেমন নারী অধিকার সুনিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করে এগোনোর চেষ্টা করেন মুশারফ।
পলাতক...
২০০৭ সালে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে। ২০০৮-এ সাধারণ নির্বাচন হলে গো হারা হারে মুশারফের দল। ইমপিচমেন্টের ভয়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লন্ডনে কার্যত পালিয়ে যান একসময়ের দাপুটে পাক সেনানায়ক। ২০১৩ সালে নির্বাচনে লড়ার আশা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু যোগ্য বিবেচিত হননি। ২০১৬ সালে দুবাই যেতে অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানেই চলে গেলেন, অবিভক্ত ভারতের, দিল্লির দরিয়াগঞ্জে জন্মানো জেনারেল পারভেজ মুশারফ।
আরও পড়ুন:রাজ্যজুড়ে শীতের আমেজ, উত্তুরে হাওয়ায় ঘুম ভাঙছে কলকাতার; কতদিন থাকবে ঠান্ডা?