নয়াদিল্লি: দিল্লি বিধানসভা ভোটের প্রচারের মধ্যেই শাহিনবাগের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রতিবাদস্থলের কাছে ১ ফেব্রুয়ারির গুলিচালনার ঘটনায় ধৃত কপিল গুজ্জরের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর দাবি দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখার। তারা জানাল, কপিলের মোবাইল ফোন থেকে এমন বেশ কিছু ছবি মিলেছে যাতে তাকে আতিশি মার্লেনা, সঞ্জয় সিংহের মতো আপ নেতাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। গত শনিবার দুপুরে শাহিনবাগের বিক্ষোভ সমাবেশের কাছেই শূন্যে গুলিচালনার অভিযোগে ধরা পড়ে কপিল। দিল্লি পুলিশের সামনেই সে গুলি চালায়। তবে সেখানকার লোকজন তাকে ধরে তাদের হাতে তুলে দেয়। সেসময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘আর কেউ নয়, ভারতে শুধু হিন্দুদের কথাই চলবে’। এই প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওর পিছনে বিজেপি-আরএসএস আছে।




আজ দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের বিস্ফোরক দাবি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, তাহলে শাহিনবাগের গুলিচালনা অরবিন্দ কেজরিবালই করিয়েছেন হিন্দুদের অপমান, ছোট করতে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। গোড়া থেকেই স্পষ্ট ছিল, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে আপ যত দূর যেতে হয়, যেতে পারে। কেজরিবাল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে হনুমান চালিশা পাঠ করেছেন। তার উল্লেখ করে সম্বিত কটাক্ষ করেন, মুখে হনুমান চালিশা, আর মনে সার্জিল চালিশা! বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডাও দিল্লি পুলিশের দাবিকে অস্ত্র করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দেন, কেজরিবালকে স্পষ্ট বলতে চাই যে, দেশ যে কোনও নির্বাচন, সরকারের চেয়েও বড় আর তার সুরক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা করা লোকজনকে এই দেশ মাফ করবে না। কেজরিবাল ও তাঁর গোটা টিমের চেহারা প্রকট হয়ে পড়েছে। দিল্লির জনতা কড়া জবাব দেবেন ওদের।



তবে গুলিচালনার ঘটনায় তাদের হাত আছে, এমন ইঙ্গিত উড়িয়ে আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেন, বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এখন ভোটের ঠিক মুখেই ছবিছাপা, চক্রান্তের কথা উঠছে। নির্বাচনের ৩-৪ দিন বাকি। বিজেপি যত পারে, নোংরা রাজনীতি করবেই। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকলে কী বোঝায়?


ডিসিপি ক্রাইম ব্রাঞ্চ রাজেশ দেও সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কিছু ছবি আমরা কপিলের ফোনে পেয়েছি যা থেকে প্রমাণ হয় এবং সে নিজেও ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, সে ও তার বাবা বছরখানেক আগে আপে যোগদান করে। ওকে দুদিনে রিম্যান্ডে নিয়েছি আমরা।
কপিলের বাবা দুবার বিএসপি-র টিকিটে, ২০০৮ এ জঙ্গপুরায়, চার বছর বাদে পতপারগঞ্জে ভোটে লড়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে।
দেও জানান, ছবিগুলি মুছে ফেলা হয়েছিল, টেকনিক্যাল টিমের সহায়তায় সেগুলি তাঁরা পুনরুদ্ধার করেছেন। তিনি বলেন, ক্রাইম ব্রাঞ্চ গুজ্জরের ডেরায় হানা দিয়ে তার ফোনটি খুঁজে পায়।

পুলিশি তদন্তে বেরিয়েছে, কপিল সেদিন শাহিনবাগে এসেছিল বাইকে চেপে। সার্থক নামে আরেকজন তার সঙ্গে ছিল। টেকনিক্যাল নজরদারি ও সিসিটিভি ফুটেজ সহ অন্যান্য তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, তারা দিল্লি-নয়ডা-দিল্লি এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে মহারানি বাগ ও হোলি ফ্যামিলি আসে। সেখানে পার্কিংয়ে কপিল তার পিস্তল ঠিকঠাক করে শাহিনবাগে যায়। সূত্রের খবর, সার্থককে কপিলের মোবাইল ফোন দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শাহিনবাগের ঘটনাটি দ্বিতীয় গুলিচালনার ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ূয়াদের সিএএ-বিরোধী মিছিলের সময় আচমকা পিস্তল থেকে গুলি চালায় এক ব্যক্তি। এক ছাত্র জখম হয়।