নয়া দিল্লি : করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরী নয় প্লাজমা থেরাপি। কোভিড রোগীকে প্লাজমা ডোনেট করে ঠেকানো যাচ্ছে না ভাইরাসের ভয়াবহতা। সেকারণে কোভিডের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট থেকে বাদ দেওয়া হল প্লাজমা থেরাপি। সোমবার রাতে এই ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)। 


মাত্র এক বছরের মধ্যে বদলে গেল চিত্রটা। দেশে করোনা মহামারী শুরু হতেই প্লাজমা দান নিয়ে দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ। বিভিন্ন রাজ্যে প্লাজমা ব্যাঙ্কের ধুম পড়ে যায়। যদিও বর্তমান গবেষণা বলছে, শরীরে করোনা ভাইরাস রুখতে প্লাজমা থেরাপি কার্য়করী নয়। সেকারণে ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট থেকে এই থেরাপিকে বাদ দিয়েছে ICMR। 


ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা বুঝতে টাস্ক ফোর্স গড়েছিল তারা। রিভাইজড গাইডলাইন অনুযায়ী, প্লাজমা থেরোপিকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাস্ক ফোর্স। শুক্রবারই প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে টাস্ক ফোর্স। ICMR-এর বৈঠকে টাস্ক ফোর্সের সবাই প্লাজমা থেরাপির বিরদ্ধে সায় দেন। 


এতদিন দেশে প্লাজমা থেরাপির 'অফ লেভেল' ব্যবহারের প্রচলন ছিল। গাইড লাইন অনুসারে, করোনা আক্রান্ত উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিকে এক সপ্তাহের মধ্যে ডোনারের প্লাজমা দিতে হত। সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থাতেই এই প্লাজমা দেওয়ার অনুমতি ছিল। যদিও এখন সেই থেরাপির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে ICMR-এর টাস্ক ফোর্স। 


প্লাজমা থেরাপিকে কোভিডের চিকিৎসা থেকে বাদ দেওয়ার সূত্রপাত, একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। যেখানে দেশের গবেষক, চিকিৎসকরা করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়ে দেশের প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজর কে বিজয়রাঘবনকে চিঠি লেখেন তাঁরা। চিঠিতে দেশের নামজাদা গবেষক ও ডাক্তাররা জানতে চান, কীসের ভিত্তিতে যুক্তিহীন-অবৈজ্ঞানিক প্লাজমা থেরাপিকে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে ? 


প্লাজমা থেরাপি নিয়ে লেখা চিঠিতে ICMR-চিফ বলরাম ভার্গভ ও এইমস ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়াকেও একই প্রশ্ন করা হয়। ডাক্তাররা বলেন, বর্তমানে প্রমাণ ছাড়াই প্লাজমা থেরাপি চালু রয়েছে দেশে। যা একদমই ঠিক নয়। কোভিডের প্রথম দিকে প্লাজমা থেরাপির সঙ্গে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার একটা সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল। সে কারণেই তখন করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা হয়। যদি এখন তারই কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  


চিঠিতে বিশিষ্ট ভ্যাকসিনোলজিস্ট গঙ্গাদীর কং ও সার্জেন প্রমেশ সিএস প্লাজমা থেরাপির ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, এর মাধ্যমে করোনার ভয়াবহতা আরও বেড়ে যেতে পারে। আরও মারাত্মক কোভিড ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হতে পারে এই যুক্তিহীন প্লাজমা থেরাপির ফলে। এই বলেই থেমে থাকেনি গবেষক-ডাক্তারদের চিঠি। সেখানে বলা হয়েছে, এই যুক্তিহীন প্লাজমা থেরাপির ফলে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগী ও তাঁর পরিবারকে হেনস্থা হতে হচ্ছে। একটা অযৌক্তিক থেরাপির জন্য প্লাজমা দিতে হচ্ছে তাঁদের। এমনকী রোগীকে সুস্থ করতে তাঁর পরিবারও এই প্লাজমার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। সরকারি চিকিৎসা এজেন্সির গাইডলাইনের ফলেই এই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সবাইকে। যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।


কী এই প্লাজমা থেরাপি ? চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাই এই থেরাপির মূল উৎস। তাঁদের শরীরের অ্যান্টিবডি রক্তের মাধ্যমে সিরিয়াস করোনা রোগীর শরীরে পাঠানো হয়। যার মূল উদ্দেশ্য আক্রান্তের শরীরেও প্রতিরোধাক ক্ষমতা গড়ে তুলবে ওই অ্যান্ডিবডি। কিন্তু কোনও প্রমাণ ছাড়াই এই গাইডলাইন দিয়েছে ICMR।


এই বিষয়ে ICMR-এর চিন্তাধারা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় চিঠিতে। যেখানে বলা হয়, দেশের ৩৯টি পাবলিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে গণহারে প্লাজমার নমুনা সংগ্রহ করে ICMR-PLACID। যাতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সঙ্গে প্লাজমা থেরাপির কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। সীমিত নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমেই এই পরীক্ষা চালোনো হয়েছিল। এমনকী ১১,৫৮৮ জনের মধ্যে প্লাজমা দিয়ে কোনও ধরনের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়নি। 


এ প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনার উদাহরণ দেন ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, 'প্লাজমা এআর' ট্রায়াল নামে এর আগে আর্জেন্টিনাতেও একই গবেষণা হয়েছিল। যদিও নিরাস হতে হয় তাদেরও। দেখা যায়, প্লাজমা থেরাপির ফলে করোনা রোগীর কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।