নয়াদিল্লি: নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়নি এখনও। তবে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সেই আবহে দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকেও কার্যত 'সংরক্ষণ-বিরোধী' বলে দাগিয়ে দিলেন মোদি।  তাঁর দাবি, বিআর অম্বেডকর না থাকলে, তফসিলি, অনগ্রসর শ্রেণি কখনও সংরক্ষণই পেতেন না। (Narendra Modi)


বুধবার রাজ্যসভায় জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে আগাগোড়া কংগ্রেসকে আক্রমণ করে গেলেন মোদি। আবারও টেনে আনলেন নেহরুর প্রসঙ্গ। মোদি বলেন, "আজকাল নেহরুজি প্রায়শই স্মরণ করি আমি। একবার মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছিলেন উনি, তাতে লিখেছিলেন, উনি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কারণ সংরক্ষণ অযোগ্যদের প্রাধান্য দেয়।" (Modi on Nehru)


 নেহরুকে টেনে আনায় প্রতিবাদ জানান কংগ্রেস সাংসদরা, তার মধ্যেই মোদি বলে চলেন, "নেহরুজি বলতেন, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি চাকরিতে সংরক্ষণ পেলে, সরকারের কাজের গুণমানের অবনতি ঘটবে। উনি নিয়োগও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নেহরুজির কথা বরাবর বেদবাক্য কংগ্রেসের কাছে। এ থেকেই আপনাদের মানসিকতা বোঝা যায়।"


আরও পড়ুন: PM Modi: মমতার আসন চ্যালেঞ্জকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে বিঁধলেন মোদি !


মোদি আরও বলেন, "কংগ্রেস বরাবর তফসিলি জাতি-উপজাতিদের স্বার্থবিরোধী। কিন্তু আমরা গোড়া থেকেই ওঁদের প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। প্রথমে দলিত, এখন আদিবাসী। আমনাদের প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পান? আমাদের সব কর্মীরা তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির। রাষ্ট্রপতি পদে আদিবাসী মহিলার (দ্রৌপদী মুর্মু) নিয়োগেরও বিরোধী ছিলেন আপনারা। বিজেপি থেকে যাওয়া একজনকে (যশবন্ত সিনহা) সমর্থন করছিলেন।"


নেহরুকে 'সংরক্ষণ বিরোধী' বলে উল্লেখ করে একটি চিঠির কিছু অংশও পড়ে শোনান মোদি, যা নেহরুর লেখা বলে দাবি করেন তিনি। ইতিহাসেও ওই চিঠির উল্লেখ মেলে। ১৯৬১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাঠানো ওই চিঠিতে নেহরু লেখেন, 'জাত-ধর্মের নিরিখে যদি সংরক্ষণ দেওয়া হয়, প্রতিভাবান, যোগ্য হয়ে ওঠার পরিবর্তে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণিতে রয়ে যাব আমরা। জাতপাতের নিরিখে সংরক্ষণের বিষয়টি এতদূর গড়িয়েছে দেখে আমি দুঃখিত।  ধর্ম এবং জাতপাতের নিরিখে পদোন্নতি হতে দেখেও স্তম্ভিত আমি। এতে বিপর্যয় অনিবার্য। অনগ্রসর শ্রেণিকে অবশ্যই সবরকম ভাবে সাহায্য করতে হবে, কিন্তু যোগ্যতার সঙ্গে আপস চলবে না। নিম্ন মেধার উপর ভর করে কী করে রাষ্ট্রায়াত্ত বা অন্য কোনও ক্ষেত্র গড়ে তুলব আমরা?'


ওই চিঠিতে নেহরু আরও লেখেন, 'সম্প্রতি মুখ্য মন্ত্রীদের সঙ্গে যে বৈঠক হয়, তাতে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সুবিধাপ্রদানের কথা ওঠে, জাতপাতের নিরিখে নয়। তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদেরও অবশ্যই সাহায্য প্রাপ্য। কিন্তু সংরক্ষণে সায় নেই আমার, বিশেষ করে চাকরিতে। সেই সবকিছুরই বিরোধী আমি, যা অযোগ্যতা এবং নিম্ন গুণমানের দিকে ঠেলে দেয় আমাদের। আমি সব ক্ষেত্রেই নিজের দেশকে প্রথম সারিতে দেখতে চাই। গুণমানের সঙ্গে আপস করলে, পরাজয় অনিবার্য'। নেহরুর এই চিঠির উল্লেখ করেই এদিন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে 'সংরক্ষণ বিরোধী' বলে উল্লেখ করেন মোদি।