নয়াদিল্লি: বিরোধী জোটের 'INDIA' নামকরণ নিয়ে আগাগোড়াই আক্রমণাত্মক তিনি। এবার আক্রমণের ধার আরও বাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি বিরোধী জোটকে আক্রমণ করতে গিয়ে টেনে আনলেন 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের প্রসঙ্গ। তাঁর দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মহাত্মা গাঁধীর যেমন 'ভারত ছাড়ো' মন্ত্র বেঁধে দিয়েছিলেন, তেমনই বর্তমানে ভারতবাসী দুর্নীতিগ্রস্ত, পরিবারতন্ত্রকে দেখে 'Quit INDIA' বা 'ভারত ছাড়ো' বলছেন। (Narendra Modi)
দেশের ৫০৮টি রেল স্টেশনকে নতুন ভাবে সাজানোর প্রকল্প শুরু করছে কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার সেই উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ভার্চুয়াল মাধ্য়মে সেখান থেকে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। আর সেই সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বিজেপি বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। বিরোধী জোট 'INDIA'-কে মানুষের মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে, 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের প্রসঙ্গে টানেন। (Opposition Alliance)
বিরোধীদের আক্রমণ করে এদিন মোদি বলেন, "৯ অগাস্ট ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূচনা হয়। মহত্মা গাঁধী মন্ত্র বেঁধে দিয়েছিলেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনই স্বাধীনতা অর্জনের পথে ভারতকে আরও এগিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আজ গোটা দেশ সব অশুভ শক্তিকে বলছে ভারত ছাড়ো, দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, পরিবারতন্ত্র ভারত ছাড়ো, তুষ্টিকরণ ভারত ছাড়ো। চারিদিকে এখন এই রবই শোনা যাচ্ছে।"
বিরোধীরা নেতিবাচক রাজনীতি করছেন বলেও এদিন অভিযোগ করেন মোদি। তাঁর অভিযোগ, "বিরোধীদের একটাই নীতি, না তাঁরা নিজেরা কাজ করবেন, না কাউকে কাজ করতে দেবেন। আমরা এর ঊর্ধ্বে গিয়ে উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সদর্থক রাজনীতি করছি। অমৃত কালের সূচনা ঘটেছে ভারতে। গোটা বিশ্ব ভারতকে দেখছে। নতুন ইতিহাসের সূচনা ঘটছে ভারতে।"
তবে সরকারি অনুষ্ঠানকে এভাবে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহারের জন্য মোদিকে বিঁধতে ছাড়েননি বিরোধীরাও। বাংলার মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, "আজকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের জন্যই মোদির বন্ধু মেহুল চোক্সি, নীরব মোদি থেকে শুরু করে, বিশেষ করে গুজরাতে বড় বড় হিরে ব্যবসায়ীরা কয়েক লক্ষ টাকা চুরি করে চলে গিয়েছেন। উনি কী বলবেন দুর্নীতির কথা! ওঁর সরকার যেভাবে দুর্নীতি করেছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বাইরে চলে গিয়েছে। কী ব্যবস্থা নিয়েছেন উনি?"
সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ির বক্তব্য, "বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। সেই জন্যই সংসদে মুখোমুখি হতে চাইছেন না। আর মহাত্মা গাঁধীর কথা বলছে বিজেপি, আরএসএস? যারা মহাত্মা গাঁধীকে খুন করল, মহাত্মা গাঁধীর রক্তে যাদের হার লাল, তারা কোন সাহসে মহাত্মা গাঁধীর কথা বলে? কতটা নির্লজ্জ হলে এমন করা যায়! ওঁর আমলে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সম্পত্তি কেনাবেচা, খনি, রেল, ব্যাঙ্ক...আদানি-আম্বানি...এই দুর্নীতির মাশুল দিতে হচ্ছে মানুষকে। এমন ভয়ঙ্কর দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরাচার সরকার কখনও দেখিনি। মানুষ মানুষকে খুন করছে, দাঙ্গা হচ্ছে, আগুন জ্বলছে, একটা কথা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখে। আমাদের সংসদে কথা বলতে চান না, অথচ আমেরিকার পার্লামেন্টে বক্তৃতা করতে যান। তাহলেই ওখানেই থাকু!"
এর আগেও, 'INDIA' নামকরণ নিয়ে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেছিলেন মোদি। তাঁর দাবি ছিল, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের নামেও 'INDIA' রয়েছে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি বিদেশি নাগরিকের তৈরি। শুধু নাম 'INDIA' রাখলেই গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় না। যদিও বিরোধীদের দাবি, জোটের নাম শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছেন মোদি।