নয়া দিল্লি: গতবারের সংসদ উত্তাল হয়েছিল মণিপুর কাণ্ডে। মণিপুরে টানা জাতিগত হিংসা এবং মহিলাদের উপর ভয়াবহ অত্যাচারের কথা সামনে এলেও দীর্ঘদিন মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। পরে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মোদি- যদিও তা সংসদের বাইরে।  বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, মণিপুরে বিজেপির সরকার, কেন্দ্রেও ক্ষমতায় বিজেপি, তাও কেন মণিপুরের হিংসা থামাতে পারেন না নরেন্দ্র মোদি কিংবা বীরেন সিংহরা? এবার সংসদের মধ্যেই মণিপুর (manipur violence ) নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন মোদি। তারসঙ্গে চোপড়ার সালিশি সভার প্রসঙ্গও শোনা গেল তাঁর মুখে। এর সঙ্গেই খোঁচা দিলেন বিরোধীদের। তাঁর প্রশ্ন, বিরোধীরা কেন চোপড়ায় মহিলাকে মারধরের ঘটনায় মুখ খোলেন না? এইভাবে নাম না করে কি মমতা বন্দ্য়োাধ্য়ায়কেও খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)? 


এদিন প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'কিছুদিন আগে আমি বাংলার কিছু ভিডিও সামাজ মাধ্যমে দেখেছি। এক মহিলাকে সেখানে রাস্তার ওপর সবার সামনে মারধর করা হচ্ছিল। বোন চিৎকার করছিল। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।  সবাই ভিডিও রেকর্ড করতে ব্যস্ত। কিন্তু বড় বড় নেতা আমি শুনছিলাম কালকে, এইসব ঘটনার জন্য কোনও বেদনা তাঁদের মন্তব্যে ছিল না। এর থেকে বড় লজ্জার, দুঃখজনক আর কী হতে পারে?' তিনি আরও বলেন, 'আর যিনি নিজেকে অনেক বড় প্রগতিশীল নেত্রী মনে করেন, উনিও মুখে তালা লাগিয়ে বসে গেলেন। কারণ এর সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে জড়িত কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজ্যের সঙ্গে রয়েছে। আর তাই জন্য আপনি মহিলাদের ওপর অত্যাচার নিয়ে চুপচাপ হয়ে যাবেন? সভাপতি মহাশয়, আমার মনে হয়, যেভাবে বরিষ্ঠ নেতারা এই ধরনের বড় ঘটনাকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন, তাতে দেশের পীড়া তো হয়ই, মা-বোনেদের আরও বেশী পীড়া হয়।' এর আগে লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং প্রচার চলাকালীন সন্দেশখালির প্রসঙ্গ নিয়েও বারবার-লাগাতার তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। 


তৃণমূলের (TMC) মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, 'বাংলার মানুষ জানতে চায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বাংলায় চোপড়ার মতো বা জলপাইগুড়ির মতো কোনও ঘটনা ঘটলে তৃণমূল দলগত এবং সরকারগতভাবে নিন্দা করে। তৃণমূলের সঙ্গে যোগ থাকা সত্ত্বেও, কোনও অভিযুক্ত পার পায় না। কিন্তু, হাথরাস, উন্নাও...সহ ভারতবর্ষের বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্য়ে যখন একের পর এক নারী নির্যাতন এবং গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে, অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে বিজেপির প্রশাসন গ্রেফতার করেছে?'


সোমবার লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে বলতে উঠে মণিপুর ইস্য়ুতে মোদি সরকারকে তুলোধনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। সেদিন লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের সময়ও মণিপুর নিয়ে লাগাতার স্লোগান দিয়েছিলেন বিরোধী সাংসদরা। তারপরে বুধবার মণিপুর নিয়ে সংসদে মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর তোপ, 'মণিপুর নিয়ে যাঁরা আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, মণিপুরই একদিন তাঁদের প্রত্যাখ্যান করবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলে মণিপুরের পরিস্থিতি শোধরানোর নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেই চেষ্টায় ধীরে ধীরে সাড়াও দিচ্ছে মণিপুর। স্বাভাবিকত্ব ফিরছে সেখানে।'


বুধবার নরেন্দ্র মোদির ভাষণের মধ্য়েই রাজ্যসভায় ‘ঝুট-ঝুট’ স্লোগান ওঠে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বলতে দেওয়ার দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। সেই দাবি না মানায় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা। ‘বিরোধীশূন্য’ রাজ্যসভাতেই মণিপুর নিয়ে অবশেষে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: কবে শুরু হচ্ছে অ্যামাজনের প্রাইম ডে সেল? ক্রেতাদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকছে?