কমলকৃষ্ণ দে ও সোমনাথ মিত্র (পূর্ব বর্ধমান) : রাজ্যপালের অভিনন্দন-বার্তা দেখিয়ে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমানে প্রতারণা-চক্রের পর্দাফাঁস। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে! এদিকে অভিযুক্তের সঙ্গে দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহের ছবি ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতারণা চক্রের জাল ছড়িয়ে গোটা রাজ্যজুড়ে।
অভিযোগকারীদের দাবি, রাজ্যপালের অভিনন্দন-বার্তা দেখিয়ে তাঁদের আস্থা অর্জন করে প্রতারকরা। ২০১৮ থেকে এই প্রতারণা-চক্র সক্রিয়। রোড সেফটি অর্গানাইজেশনে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে আবেদনকারীদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। এমনকী প্রশিক্ষণও চলে।
ঘটনা নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, অভিযোগ পেয়ে গ্রেফতার করি। রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছিল। তদন্ত করে দেখছি চিঠিগুলি। দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে একজনের নাম জানতে পেরেছি। নিমতা থানার অধীনে বিরাটি থানার বাসিন্দা।
কেউ দিয়েছেন ৫০ হাজার, কেউ ৮০ হাজার। কেউ আবার সরকারি চাকরি পেতে দিয়ে বসেছেন ২ লক্ষ টাকা! অভিযোগ, ২০১৮ সাল থেকে পথ নিরপত্তার মোড়কে সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে তোলা হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। শামিমা মণ্ডল নামে এক অভিযোগকারিণী বলেন, আমরা রাজ্যপালের ওটা দেখে ইমপ্রেস হই। আমরা লেখা দেখিনি। বাঁধানো একটি ছবি ছিল অফিসে, তিন জায়গায় অফিস ছিল। সত্যি ভেবেছিলাম রাজ্যপাল। ৮৫ হাজার টাকা দিতে হবে। দিয়েছিলাম।
অভিযোগকারীদের দাবি, এক বছর আগে বারাসাতের প্রজ্ঞালয় অডিটোরিয়ামে ৩ দিন ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চাকরি হয়ে গেছে, আশ্বাস দিয়ে মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু মেলেনি নিয়োগপত্র। সোমবার পালশিটের হোটেলে ডেকে শপথবাক্য পাঠ করতে বলা হয়। চাওয়া হয় ৩ হাজার টাকা।
যেটা দেখে পড়তে বলা হয় চাকরিপ্রার্থীদের, তার উপরে অশোক স্তম্ভের ছবি। নীচে লেখা মিনিস্ট্রি অফ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়েজ গভর্মেন্ট অব ইন্ডিয়া। পাশে লেখা ইন্ডিয়ান রোড সেফটি ক্যাম্পেন। সোমবার পালশিটের একটি হোটেলে যখন শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, তখনই সন্দেহ হয় তাঁদের। গোপনে খবর দেওয়া হয় মেমারি থানার পুলিশকে। এরপর এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পালশিটের হোটেল থেকে ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় একটি গাড়ি। ধৃতদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ৭টি মোবাইল, ২টি পেন ড্রাইভ, রবার স্ট্যাম্প ও বেশকিছু নথিপত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এদিকে অন্যতম অভিযুক্ত দেবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাংসদ অর্জুন সিংহের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা! এনিয়ে অর্জুন সিংহ বলেন, অনেকেই বিজেপি করেন, আমি চিনি না। অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, রাজ্যপাল তো বাংলায় কীভাবে মমতার সরকারকে হেও করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর চিঠি নিয়ে কে প্রতারণা করেন, দেখতে পান না। কারণ মদত দিতেই এই চিঠি করে দিয়েছেন বলে মনে হয়, বিজেপি নেতৃত্ব জড়িত আছে বলে মনে হয়।
পুলিশ সূত্রে দাবি, এক জায়গায় নয়, জেলায় জেলায় রীতিমতো অফিস খুলে চলছিল প্রতারণা। মঙ্গলবার সন্ধেয় হুগলির তারকেশ্বরের অফিসে হানা দিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিল করা দেওয়া হয় অফিসটি।