নয়াদিল্লি:  আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও, সচেতন ভাবেই দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। মা এবং দাদার সঙ্গে মিটিং-মিছিলে কালেভদ্রে দেখা গেলেও, নির্বাচনী রাজনীতিতে পা রাখতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছিলেন গোড়াতেই। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সনিয়া এবং রাহুলের প্রচারে শামিল হওয়া প্রিয়ঙ্কা দীর্ঘ ২০ বছরের সেই পণ ভাঙলেন। কেরলের ওয়েনাড লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন তিনি। প্রিয়ঙ্কার এই মত পরিবর্তনের নেপথ্যে কংগ্রেসের কৌশলই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। (Priyanka Gandhi Vadra)


নির্বাচনী রাজনীতিতে কেন নামছেন না প্রিয়ঙ্কা, দীর্ঘ দিন ধরেই সেই প্রশ্ন উঠছিল। এবছর লোকসভা নির্বাচনের আগেও প্রিয়ঙ্কার প্রার্থী না হওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে। সনিয়া গাঁধী যেখানে অসুস্থ, সেখানে প্রিয়ঙ্কাকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী না করাতেই সকলে সায় দিয়েছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু তার পর একমাসও কাটল না, ওয়েনাড থেকে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা করলেন প্রিয়ঙ্কা। (Priyanka in Wayanad)


আচমকা মত পাল্টাননি প্রিয়ঙ্কা, বরং এটি যথেষ্ট কৌশলী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, রায়বরেলী গাঁধীদের পারিবারিক আসন। সনিয়ার পর রাহুল সেই আসন ধরে রাখবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে ওয়েনাডকে হেলাফেলা করতে চান না রাহুল। কারণ ২০১৯ সালে অমেঠী খালিহাতে ফেরালে ওয়েনাডই তাঁর মুখরক্ষা করেছিল। তাই প্রিয়ঙ্কাকে ওয়েনাডে দাঁড় করিয়ে সেখানকার মানুষের পাশে থাকারই বার্তা দিলেন তিনি। প্রিয়ঙ্কা যদি ওয়েনাডে জেতেন, সেক্ষেত্রে উত্তর এবং দক্ষিণ, দেশের দুই প্রান্তেই গাঁধী পরিবারের দুই সদস্যের উপস্থিতি বজায় থাকবে, যা আগামী নির্বাচনগুলিতে দলকে সাহায্য় করবে। 


আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: শৃঙ্খলাভঙ্গে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি, তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন খড়্গে, কেন বললেন রাহুল?


শুধু তাই নয়, প্রিয়ঙ্কার আবির্ভাবে সংসদেও কংগ্রেসের আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রিয়ঙ্কা যদি ওয়েনাডে জিতে যান, সেক্ষেত্রে এই প্রথম গাঁধী পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে সংসদের অধিবেশনে অংশ নেবেন, লোকসভায় রাহুল-প্রিয়ঙ্কা, রাজ্যসভায় সনিয়া। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গাঁধীদের তরফে আরও ধারাল আক্রমণ ধেয়ে আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 


২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রথম সনিয়া এবং রাহুলের পাশে প্রচারে শামিল হন প্রিয়ঙ্কা। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকলেও, কংগ্রেসের অন্দরে বরাবরই প্রিয়ঙ্কার কদর ছিল। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির সম্পর্ক যখন তিক্ত থেকে তিক্ততর হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, সেই সময় প্রিয়ঙ্কাই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের পূর্বের সাধারণ সম্পাদক হন প্রিয়ঙ্কা। ২০২০ সালে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দল ছাড়লে গোটা উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। 


আর সেই থেকেই নির্বাচনী সভা, মিছিলে নিয়মিত ভাষণ দেওয়া শুরু করেন প্রিয়ঙ্কা। নির্বাচনী ভাষণে সচেতন ভাবেই নারীর অধিকার, নারীর সম্মানের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দেন প্রিয়ঙ্কা। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সময় 'লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ' স্লোগান শোনা যায় প্রিয়ঙ্কার মুখে। মহিলাদের জন্য দলের ৪০ শতাংশ নির্বাচনী টিকিটের ঘোষণাও তাঁরই। 


এর পর একে একে হিমাচল প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও নির্বাচনী কৌশল রচনায় অংশ নেন প্রিয়ঙ্কা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের অন্দরে রদবদল ঘটলে, প্রিয়ঙ্কা সাধারণ সম্পাদকই রয়ে যান। তবে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু এ বছর লোকসভা নির্বাচনে আগে থেকে ফের উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় প্রিয়ঙ্কাকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠলে প্রিয়ঙ্কাকে বলতে শোনা যায়, "আমার মা এই দেশের জন্য নিজের মঙ্গলসূত্র বিসর্জন দিয়েছেন।" লোকসভা নির্বাচনে দেশের ১৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০৮টি জনসভা এবং পথসভা করেন প্রিয়ঙ্কা। 


তাই ওয়েনাডে লড়া নিয়েও আত্মবিশ্বাসের সুর ধরা পড়ে প্রিয়ঙ্কার গলায়। বলেন, "একেবারেই নার্ভাস নই আমি। ওয়ানাডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুব খুশি আমি। রাহুলের অনুপস্থিতি বুঝতে দেব না ওঁদের। রায়বরেলীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আমার। ২০ বছর সেখানে কাজ করেছি আমি। ওই সম্পর্ক কখনও ভাঙবে না।" ওয়েনাডে প্রিয়ঙ্কা কী ফল করেন, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।