অমৃতসর: পঞ্জাবে খুন হলেন দক্ষিণপন্থী, হিন্দুত্ববাদী বনেতা সুধীর সুরি (Sudhir Suri)। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ব্যস্ত রাস্তায়, পুলিশের সামনেই খুন হন সুধীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই দৃশ্য উঠে এসেছে। তাতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে  (Punjab Shootout)।


পঞ্জাবে গুলি করে খুন করা হল দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী নেতাকে!


পঞ্জাবে শিবসেনা তকসালি (Shiv Sena Taksali ) সংগঠন চালাতেন সুধীর। বৃহস্পতিবার অমৃতসরে একটি মন্দিরের সামনে সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তিনি। ব্যবস্থাপনা নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। সেই সময়ই পর পর গুলি এসে বেঁধে তাঁর শরীরে। স্থানীয় এক দোকানদারই সুধীরকে লক্ষ্য করে গুলি চালান বলে অভিযোগ।


ঘটনার সময় সমর্থকরা ঘিরে রেখেছিল সুধীরকে। ১২ জন নিরাপত্তারক্ষীও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এমনকি স্থানীয় পুলিশও ঘিরে রেখেছিল বিক্ষোভস্থল। সেই কড়া নিরাপত্তার বলয় ভেদ করেই সুধীরকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। এই ঘটনায় সন্দীপ সিংহ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুধীরকে লক্ষ্য় করে তিনি পাঁচটি গুলি চালান বলে অভিযোগ। তার মধ্যে দু’টি গিয়ে বেঁধে সুধীরের শরীরে। তাতে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁর।


অমৃতসর শহরের পুলিশ কমিশনার অরুণ পাল সিংহ জানিয়েছেন, যে পিস্তল থেকে গুলি চালানো হয়, সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঠিক কী কারণে খুন করা হল, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এ নিয়ে কিছু খোলসা করেনি পুলিশও। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি এসইউভি গাড়িতে চেপে ঘটনাস্থলে পৌঁছন অভিযুক্ত। গাড়িতে আরও তিন জন ছিলেন। তবে ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন তাঁরা।


আরও পড়ুন: Himachal Election 2022: 'কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে বাতিল অগ্নিপথ', হিমাচলের সভায় ঘোষণা প্রিয়ঙ্কার


প্রত্যক্ষ ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না সুধীর। তবে জ্বালাময়ী এবং সাম্প্রদায়িক ভাষণের জন্য় পরিচিত ছিলসেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ভাষণের এমন একাধিক ভিডিও রয়েছে। মূলত শিখ সংগঠনগুলিকে নিশানা করে ভাষণ দিতেন তিনি। খালিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন। সুধীরের নামে ঘৃণা ভাষণের পাঁচটি মামলা চলছিল। তবে তার সঙ্গে খুনের যোগ রয়েছে কিনা, এখনও স্পষ্ট নয়।


অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার আপাতত এলাকায় শান্তি বজায় রাখাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতায় যাতে কোনও ভাবেই ইন্ধন জোগাতে না পারেন কেউ, তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উস্কানিমূলক বার্তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।


খুন হওয়ার আগে, এ দিন মজিতা রোডের গোপাল মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একদফা ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়েন সুধীর। মন্দিরের ভিতরের মূর্তির অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। হামলার এক ঘণ্টা আগে ফেসবুক লাইভও করেন সুধীর। আবর্জনার স্তূপে পুরনো মূর্তি ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, “মূর্তির এমন অবমাননা বরদাস্ত করব না আমরা। সে হিন্দুরা করলেও নয়।”


যে সময় সুধীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়, রাস্তায় ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। তাঁর পাশে ছিলেন এক সহযোগীও। হামলার পর অভিযুক্তকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায় সুধীরের ওই সহযোগীকেও। তবে সুধীরের হত্যায় পরিস্থিতি তেতে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ কয়েক মাস আগেই পঞ্জাবে খুন হন গায়ক সিধু মুসেওয়ালা। পর পর এই ঘটনায় পঞ্জাবে আপ সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


শুধু তাই নয়, সুধীরের মৃত্যুতে কয়েক বছর আগে পর পর ঘটে যাওয়া দক্ষিণপন্থী ধর্মগুরুদের হত্যার স্মৃতিও ফিরে আসছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে পঞ্জাবে এ ভাবেই বেশ কয়েক জন দক্ষিণপন্থী এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা খুন হন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে লুধিয়ানায় খুন হন রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ নেতা রবীন্দ্র গোঁসাই। তাঁকেও গুলি করে খুন করা হয়। ওই বছরই জুন মাসে খুন হন খ্রিস্টান পাদরি সুলতান মাসিহ তাঁকেও গুলি করে খুন করা হয়। ডেরা সাচা সওদা সংগঠনের বেশ কয়েক জন নেতাও খুন হন। খুন হন হিন্দু তখত্ নামের একটি সংগঠনের নেতাও। জলন্ধরে খুন হন সঙ্ঘ নেতা জগদীশ গগনেজাও।


জ্বালাময়ী এবং উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন সুধীর


পঞ্জাবে সুধীরের মতোই বেশ কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবসেনার নাম ব্যবহার করে। যদিও তাদের সঙ্গে মহারাষ্ট্রে বালাসাহেব ঠাকরের প্রতিষ্ঠা করা শিবসেনার কোনও সম্পর্ক নেই। এই সমস্ত সংগঠনের নেতাদের উপর আগেও এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই প্রশাসন নিরাপত্তা দেয় তাঁদের। তবে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে পুলিশই ছক কষে হামলা চালিয়েছে, এমন ঘটনাও সামনে এসেছে আগে।