অর্ণব মুখোপাধ্যায়, পুরী, ওড়িশা: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের (Puri Jagannath Temple) রত্নভাণ্ডারে সাপের আতঙ্ক। রত্নভাণ্ডারের মধ্যে বিষাক্ত সাপ থাকার আশঙ্কায় ডাকা হল সর্পবিশারদদের। সর্পবিশারদের সাহায্য নিয়ে খোলা হল নীলমাধবের ঐশ্বর্যের ভাঁড়ার। স্বর্ণকারদের ডেকে সিন্দুক আনিয়ে খোলা হল রত্নভাণ্ডার।


প্রায় অর্ধশতক পরে:
৪৬ বছর পর খোলা হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। ১৯৭৮ সালে শেষবার খোলা হয়েছিল পুরীর মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার।  রত্ন ভাণ্ডারের দুটি ভাগ, বহির ভাণ্ডার ও ভিতর ভাণ্ডার। জগন্নাথদেবের অলঙ্কার- (Jagannath Temple )সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিস রয়েছে রত্ন ভাণ্ডারে।


উল্টোরথের আগে আজই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। চাবি দিয়ে না খুললে রত্ন ভাণ্ডারের তালা ভাঙা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।


এর আগে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে পুরীর রাজা গজপতি দিব্য়সিংহ জানান, জগন্নাথদেবের অলঙ্কার-সহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিস এই রত্ন ভাণ্ডারে রয়েছে। মূল অংশ রয়েছে ভিতর ভাণ্ডারে। এই ভিতর ভাণ্ডার খুব বেশি খোলা হয় না। মন্দিরের গর্ভ গৃহের মধ্যের এই রত্ন ভাণ্ডার রয়েছে। বাহির ভাণ্ডারে জগন্নাথদেবের সাজার অলঙ্কার ও নানা দ্রব্য থাকে। বহু মূল্যবান সম্পদ, এমন গয়না যা প্রতিদিন ব্যবহার হয় না, সেগুলিই থাকে ভিতর ভাণ্ডারে। 


কেরলের তিরুবনন্তপুরমের শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির হোক বা মায়ানমারের মান্দালে মন্দির- কিংবদন্তীতে জড়িয়ে রয়েছে নানা সাপের কাহিনী। লুকনো সম্পদ বা গুপ্তধনের পাশে সাপের পাহারা দেওয়ার কাহিনি নানা দেশে নানা সময়ের লোককথায় রয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেও সেই রকমই কাহিনি রয়েছে। কথিত আছে, জগন্নাথদেবের দুর্মূল্য রত্ন ও যাবতীয় মূল্যবান জিনিসের এই ভাণ্ডারের ভিতর থেকে শোনা যায় সাপেদের হিস হিস শব্দ।


জগন্নাথদেবের রত্ন ভাণ্ডার কি পাহারা দেয় নাগ-নাগিনের দল? রত্ন ভাণ্ডার খোলা হলে কী করবে তারা? সব কথা মাথায় রেখেই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা SOP তৈরি করেছিল ওড়িশা সরকার। রবিবাসরীয় সকাল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয় পুরীর মন্দিরের। বাইরে নিয়োগ করা হয়, ভুবনেশ্বর থেকে আনা সাপ বিশেষজ্ঞদের।


৪৬ বছর পর, খোলা হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। ঘড়ির কাঁটায় তখন, ঠিক দুপুর ১টা বেজে ২৮ মিনিট। মাহেন্দ্রক্ষণে খোলা হয় রত্নভাণ্ডারের দরজা। যে ভাণ্ডারে, ৮০০ বছরের পুরনো মন্দিরের রত্ন-সম্পদ জমা আছে।


পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল দীর্ঘদিনের। ভাণ্ডারে বৈদুর্যমণি, নীলকণ্ঠমণি-সহ অসংখ্য মূল্যবান রত্ন রয়েছে বলে দাবি পাণ্ডাদের। ১৯৭৮ সালে শেষবার অডিট হয়েছিল রত্ন ভাণ্ডারের। ২০১৮ সালে একবার রত্ন ভাণ্ডার খোলার চেষ্টা করা হয়। ১৬ জনের দল ঢোকার চেষ্টা করেন ভিতর ভাণ্ডারে। কিন্তু কোনও কারণে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্য়েই সেই অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। 


ক্ষমতায় এসে ফরে রত্ন ভাণ্ডারের অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয় ওড়িশার বিজেপি সরকার। লোকসভা ভোটের প্রচারে ভাণ্ডারের কথা শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে। শেষমেশ, ওড়িশা হাইকোর্টের নির্দেশে বিজেপি সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, খোলা হবে রত্ন ভাণ্ডার। সেই মতো এদিন খুলল দরজা।


মন্দিরের গর্ভগৃহের মধ্যে রয়েছে রত্ন ভাণ্ডার। ভাণ্ডারের দুটি ভাগ, বাহির ভাণ্ডার ও ভিতর ভাণ্ডার। জগন্নাথদেবের যা কিছু আভূষণ থাকে বাহির ভাণ্ডারে। আর ভিতর ভাণ্ডারে থাকে মূল্যবান সামগ্রী, অলঙ্কার। বছরে ১৫ দিন বাহির ভণ্ডার খোলা হয়, বন্ধ থাকে ৩৫০ দিন। বহু বছর খোলা হয়নি ভিতর ভাণ্ডার। শোনা যায়, রত্ন ভাণ্ডারে রয়েছে অসংখ্য কাঠের সিন্দুক। সেগুলির উচ্চতা ৩ ফুট, লম্বায় ৯ ফুট। ১৯৭৮ সালের অডিট অনুযায়ী, রত্ন ভাণ্ডারে রয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ রকমের অলঙ্কার। যার মধ্যে ৪৫৪ ধরনের খাঁটি সোনার অলঙ্কার রয়েছে। কিছু কিছু অলঙ্কারের ওজন এক কেজির বেশি। মোট সোনার অলঙ্কারের ওজন ১২ হাজার ৮৮৩ ভরি। আছে ২৯৩ রকমের রুপোর গয়না, যেগুলির ওজন ২২ হাজার ১৫৩ ভরি। 


রবিবার রত্নভান্ডারের ভিতর থেকে কোনও সম্পদ বাইরে আনার কাজ হয়নি। এদিন শুধু রত্নভাণ্ডারের ভিতরের অংশটি ঘুরে দেখে ১১ সদস্যের বিশেষ দল। ফলে, দরজা খুললেও রত্নভাণ্ডারের রহস্য এখনও কাটেনি।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে


আরও পড়ুন: সূর্য গোচরে ৫ রাশিতে বাম্পার সাফল্য, পূর্ণ হবে কোষাগার, রবির তেজে বাড়বে সম্পদ