কলকাতা : কাল ২২ শ্রাবণ। বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। এশিয়ার প্রথম নোবেল জয়ী কবি-সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতের জাতীয় সংগীতই নয়, লিখেছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও('আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি')। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত শ্রীলঙ্কা মাথা-র রচয়িতা আনন্দ সমরাকুনও কবিগুরুর দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে মনে করা হয়।


১৮৬১-র ৭ মে রবীন্দ্রনাথের জন্ম(১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ)। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। বাবা দেবেন্দ্রানাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবী। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ। ১১ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে ভারত-ভ্রমণে বের হন। ফিরে এসে মৈথেলী কায়দায় একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। বাড়িতে প্রাথমিক পাঠ। এর পর ১৮৭৮ সালে ১৭ বছর বয়সে তাঁকে ব্রিটেন পাঠানো হয়। শিক্ষার্জনের জন্য। বাবা দেবেন্দ্রনাথে আশা ছিল, ছেলে আইনজীবী হবে। ব্রিটেনে প্রথম দিকে পূর্ব সাসেক্সের ব্রিজটনে থাকতেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে পড়াশোনা শুরু। সেই সময় শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন লেখা পড়তে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। ব্রিটেন থেকে কোনও ডিগ্রি অর্জন না করেই ১৮৮০ সালে দেশে ফিরে আসেন। নিজেই সাহিত্যকর্ম শুরুর ভাবনা-চিন্তা নিয়ে। ১৮৮২ সালে রচনা করলেন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ ।


খ্যাতি :  ১৮৯০ সালে যান শিলাইদহে। সেই সময় প্রকাশিত হয় কবির যৌবনকালের কাব্যগ্রন্থ "মানসী " । ১৮৯১-১৮৯৫ সালের মধ্যে তিন খণ্ডের গল্প সমগ্র "গল্পগুচ্ছ" প্রকাশিত হয়। ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে যা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। "নৈবেদ্য" ও "খেয়া"-র রচনা শান্তিনিকেতনে বসেই। ১৯০১ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ। "গীতাঞ্জলি" রচনার হাত ধরে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমেও। যার জেরে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রচনায় রয়েছে ১৫৭টি কবিতা। ১৯১৬-র মে থেকে ১৯১৭-র এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাপান ও আমেরিকায়। সেখানে একাধিক জায়গায় ভাষণ দেন। মূলত, জাতীয়তাবাদের উপর। মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। ৬০ বছর বয়সে আঁকাআঁকির উপর বেশি করে ঝোঁক বাড়ে। তাঁর সফল চিত্রশিল্পের প্রদর্শনী হয় প্রথমে প্যারিসে। পরে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে।


পুরস্কার ও সাফল্য : সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। এরপর ১৯১৫ সালে ব্রিটেনের রাজা জর্জ পঞ্চম তাঁকে 'নাইটহুড' সম্মানে সম্মানিত করেন। কিন্তু, ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে তাঁকে D.Litt দেওয়া হয়।


অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজ : শুধু বিশ্ববরেণ্য কবিই নন, রচনা করেছেন বহু গানও। প্রায় ২ হাজার ২৩০টি রবীন্দ্র-সংগীত রয়েছে। ৯৫টি ছোটগল্পের বই, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ, নাটক(৩৮টি), উপন্যাস(১৩টি) । ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। ১৯০২ সালে মারা যান মৃণালিনী দেবী। কবিগুরুর মৃত্যু হয় ১৯৪১ সালের ৭ অগাস্ট। 


বিশ্বকবির জীবনের আকর্ষণীয় কিছু তথ্য : ২০০৪ সালের মার্চে শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ন কমপ্লেক্স থেকে চুরি যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার। কিন্তু, সেই বছরেরই ডিসেম্বরে একটি রেপ্লিকা পাঠায় নোবেল কমিটি।


গাঁধীকে "মহাত্মা" আখ্য়া দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথই। এর পাশাপাশি প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। একে অপরের প্রতি ছিল অগাধ সম্মান।


রবীন্দ্রনাথের "গীতাঞ্জলি"র প্রভূত প্রশংসা করেছিলেন ইংরাজি সাহিত্যের অন্যতম কবি WB Yeats ও ফরাসি লেখক আন্দ্রে গিড়ে ।