মিরাজ-মিগ-সুখোই ছিলই। এবার ভারতের হাতে এল রাফাল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় বায়ুসেনায় অমনিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট (ওরকা) রাফালের অন্তর্ভুক্তি গোটা এশিয়াতে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে!
বুধবার হরিয়ানার অম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটির রানওয়ে ছোঁয় ফ্রান্স থেকে আসা ৫টি সুপারসনিক রাফাল যুদ্ধবিমান। বায়ুসেনার ১৭ নম্বর গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান।
রাফালে রয়েছে ভারী অস্ত্রবহনের ক্ষমতা। বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ার-টু-এয়ার বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ মিটিওর মিসাইল সহ একাধিক অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত রাফাল।
বর্তমানে, রুশ নির্মিত মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট "সুখোই ৩০-এমকেআই" হল ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান স্তম্ভ। এখন বায়ুসেনায় ২৭২টি সুখোই রয়েছে। আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বহনের জন্য এই বিমানের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাফাল ও সুখোই-- এই দুই যুদ্ধবিমানের জুটি চিন ও পাকিস্তানের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে পারে। তাঁদের মতে, এই জুটি ভারতীয় বায়ুসেনার ক্ষমতায় বিপ্লব আনবে।
কিন্তু, কেন এমনটা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? আসুন দেখে নেওয়া যাক এই দুটি বিমানের শক্তি ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি--
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক রাফালের বৈশিষ্ট্য--
- ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রাফালের ক্ষেত্রে এই কমব্যাট রেডিয়াস হল ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার।
- ভারতের রাফালের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২ হাজার ২২২ কিলোমিটার।
- রাফাল সেকেন্ডে ৩০০ মিটার গতিতে উঁচুতে উঠতে পারে।
- পাশাপাশি রাফাল সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
- মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরতে সক্ষম এই বিমান। একদিনে পাঁচবার অভিযানে যেতে পারে।
- উচ্চতার পাশাপাশি অত্যন্ত শীতল অঞ্চল দিয়েও উড়তে পারে এই ফাইটার জেট।
- রাফাল ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০টি টার্গেট সনাক্ত করতে পারে।
- এই বিমানে রয়েছে স্পেকট্রা সিস্টেম। এর বিশেষত্ব হল এটি শত্রুর রেডার জ্যাম করতে সক্ষম। একইসঙ্গে এই সিস্টেমের মাধ্যমে রেডিও সিগন্যালকে নকল করে শত্রু মিসাইলকে ফাঁকিও দিতে পারে রাফাল।
- দেখতে যেমন স্মার্ট, শত্রুর উপর আঘাত হানতেও ততটাই ক্ষিপ্র এবং ভয়ঙ্কর।
- একসঙ্গে ৬টি আকাশ থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম রাফাল।
- রাফালে রয়েছে এমবিডিএ-র মিটিওর মিসাইল। যা ১৫০ কিমি দূরের উড়ন্ত টার্গেটে আঘাত হানতে পারে।
- পাশাপাশি রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম স্ক্যাল্প মিসাইল।
- কম দূরত্বের টার্গেটের জন্য রয়েছে হ্যামার মিসাইল। এর পাশাপাশি রয়েছে মাইকা।
- এই বিমানের ক্যানন প্রতি মিনিটে ২৫০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে পারে।
- একবারে প্রায় ৯,৫০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত অস্ত্রবহন করতে পারে রাফাল।
- ভারতের আকাশসীমার মধ্য়ে থেকেই শত্রুর সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার ভিতরে কোনও লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম রাফাল।
- এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের তুলনায় রাফালের অস্ত্রবহণ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। ফলে, ডগফাইটে, অ্য়াডভান্টেজ রাফাল।
এবার দেখে নেওয়া যাক সুখোই-৩০এমকেআই-এর বৈশিষ্ট্য--
- প্রধানত এয়ার-টু-এয়ার সুপিরিওরিটি যুদ্ধবিমান হল সুখোই-৩০। অর্থাৎ, মাঝ-আকাশে ডগ-ফাইটে এই বিমানের জুড়ি মেলা ভার।
- এই বিমান শত্রুর কোনও সামরিক ঘাঁটি বা ভূমিতে থাকা কোনও লক্ষ্যবস্তুকে গুঁড়িয়ে দিতে তুখোড়।
- রাফাল পুরোপুরি ফ্রান্স থেকে তৈরি হয়ে এলেও, রাশিয়ার থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতেই তৈরি সুখোই-৩০।
- সুখোইয়ের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২ হাজার ১২০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ টেক-অফ লিফ্ট ৩৮ হাজার ৮০০ কেজি।
- বিভিন্ন ধরনের বম্ব, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম সুখোই। মোট বহন ক্ষমতা প্রায় ৮ হাজার কেজি।
- দুই আসন বিশিষ্ট, দুই ইঞ্জিনের সুখোইতে রয়েছে একটি ৩০এমএম বন্দুক।
- মাঝারি পাল্লার গাইডেড এয়ার-টু-এয়ার, ইনফ্রারেড হোমিং স্বল্প পাল্লার মিসাইল সহ একাধিক ক্ষপণাস্ত্র বহন করতে পারে সুখোই।
- পারমাণবিক অস্ত্রবহন করতে পারে সুখোই-৩০।
- এই বিমানে বিশ্বের একমাত্র সুপারসনিক ব্রহ্মোস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের এয়ার-ভার্সান অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। একবার তা সম্পন্ন হলে, সুখোই-৩০ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।
- মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরতে সক্ষম এই বিমান। সবচেয়ে বড় কথা, ট্যাঙ্কার ছাড়াও অন্য সুখোই-এর থেকেও জ্বালানি ভরতে সক্ষম।
- সুখোই-এর ডিজাইন মাঝ-আকাশের যুদ্ধের কথা ভেবেই তৈরি। অর্থাৎ, এর ম্যানুভারেবিলিটি অসাধারণ। যে কোনও দিকে, যখন তখন বাঁক নিতে পারে সুখোই। যে কোনও দিকে অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।
- এই বিমানে রয়েছে রুশ নির্মিত রেডার ও অপটিক লোকেটর, ফরাসি নির্মিত নেভিগেশন ও হেড-আপ ডিসপ্লে সিস্টেম, ইজরায়েল নির্মিত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও উইপন গাইডেন্স সিস্টেম এবং ভারতে নির্মিত কম্পিউটার।
- শুধুমাত্র ফাইটার নয়, বম্বার হিসেবেও ভূমিকা নিতে পারে সুখোই-৩০। বিশ্বের অন্যতম সেরা চতুর্থ প্রজন্মর যুদ্ধবিমান হল এই সুখোই-৩০।
কেন রাফাল ও সুখোই-৩০ এর যুগলবন্দি ভারতের জন্য গেমচেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা?
রাফাল হল ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যার মধ্যে স্টেল্থ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অর্থাৎ, শত্রুর রেডারে ধরা পড়বে না এই বিমান। অন্যদিকে, মিরাজ-২০০০ বা সুখোই-৩০ হল তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান।
পাকিস্তানের হাতে মার্কিন নির্মিত এফ-১৬ বিমানের যে ভেরিয়েন্ট রয়েছে, তা ভারতের মিরাজ-২০০০ বিমানের সমতুল্য। অর্থাৎ, রাফালের পাল্লা অনেকটাই ভারী। পাকিস্তানের হাতে ৩২টি এফ-১৬ রয়েছে। সেখানে ভারত ৩৬টি বিমান কিনছে।
শীতল অঞ্চল দিয়েও উড়তে পারে এই ফাইটার জেট। অর্থাৎ, লেহ্-এর মতো উচ্চতায় অবস্থিত এয়ারবেস থেকেও সমান সক্ষম রাফাল।
অম্বালা থেকে সর্বোচ্চ গতি ধরলে মাত্র ৮ মিনিটেই লাহোর পৌঁছে যেতে পারবে রাফাল। আবার পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা এয়ারবেস থেকে মাত্র তিন মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে চিন সীমান্তে।
তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, রাফাল এবং ব্রহ্মোস সহ সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের এই ভয়ঙ্কর জুটি ভারতের পক্ষে গেমচেঞ্জার হতে পারে।