নয়াদিল্লি: মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব নিয়ে একাধিক সমীক্ষায় উদ্বেগ ধরা পড়লেও,  নরেন্দ্র মোদির আমলে ভারতে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সেই আবহেই, লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতবাসীকে সতর্ক করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর তথা অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan)। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে যে 'জিগির' তোলা হচ্ছে, তাতে বিশ্বাস করা ভুল হবে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। 


একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সম্প্রতি এই মন্তব্য করেন রাজন। তিনি জানান, ভারতের অর্থনীতির পরিকাঠামোয় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে। লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে সেই ত্রুটিগুলির সমাধান করা প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, "অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যে জিগির তোলা হচ্ছে, তাতে বিশ্বাস করা সবচেয়ে বড় ভুল হবে ভারতের।" (Raghuram Rajan on Economy)


রাজন আরও বলেন, "এই জিগিরকে সত্য প্রমাণিত করতে আরও অনেক বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হবে আমাদের। রাজনীতিকরা চান, আপনারা এই ধরনের জিগিরে বিশ্বাস করুন। লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছি বলে ওঁরা মানুষের মনে বিশ্বাস গড়ে তুলতে চান। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দেওয়া বড় ভুল হবে।"


আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: মমতার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন? নির্বাচনী প্রচারে ফের বেলাগাম দিলীপ, কমিশনে গেল তৃণমূল


৬১ বছর বয়সি রাজন এই মুহূর্তে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো বুথ স্কুল অফ বিজনেসে অধ্যাপনায় নিযুক্ত। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে যে দাবি করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার, সেই নিয়েও মুখ খোলেন রাজন। তাঁর কথায়, "দেশের বহু ছেলেমেয়ে হাইস্কুলের শিক্ষাও সম্পূর্ণ হয়নি। স্কুলছুটের হার অত্যন্ত বেশি। কর্মশক্তিতে যদিও ঘাটতি নেই, কিন্তু ভাল চাকরি করেন তার উপর সুফল  নির্ভর করছে। আমার মতে, এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। তাই এই ধরনের জিগির দাবি অর্থহীন।"


লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, নতুন সরকারকে শিক্ষা এবং কর্মশক্তি নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানান রাজন। তাঁর মতে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতাবৃদ্ধি নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে সামনে। এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে দেশের তরুণ জনসংখ্যার উপর ভর করেও সুফল পাবে না ভারত। উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে ভারতে বৃদ্ধির হার স্থায়ী ভাবে ৮ শতাংশ হতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে প্রদত্ত ভর্তুকিতে যত টাকা খরচ করে, বার্ষিক বাজেটে যদি ওই পরিমাণ টাকা উচ্চশিক্ষার খাতে বরাদ্দ করা যেত, তাতে অনেক বেশি ফল পাওয়া যেত বলে মত রাজনের। বিদেশি সংস্থাগুলিকে ভারতে ব্যবসা করতে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় কেন্দ্র। সেই তুলনায় উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সেই প্রসঙ্গেই এমন মন্তব্য করেছেন রাজন। তাঁর মতে, শুধু কর্মশক্তি থাকলেই হবে না, তারা কাজে কতটা পারদর্শী, ভাল চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার মতো দক্ষতা রয়েছে কি না, আগে তার উপর জোর দিতে হবে।