নয়াদিল্লি: ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে কেউ কাউকে রেয়াত করেন না। সুযোগ পেলে পিছপা হন না পিছন থেকে ছুরি বসিয়ে দিতেও। কিন্তু ভারতীয় শিল্পজগতের এক ব্যতিক্রমী চরিত্র রতন টাটা। শিল্পপতি পরিচয়ে পরিচিত হলেও, কোনও মলিনতা, ঘৃণা স্পর্শ করতে পারেনি তাঁকে। দুর্নীতি এবং তাঁর নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয়নি কখনও। কোন মন্ত্রে নিষ্কলঙ্ক রইলেন তিনি? উত্তর দিয়েছিলেন নিজেই। (Ratan Tata)


মারা গিয়েছেন বলেই নয়, বরাবরই দেশের সব মহলে সমাদর পেয়ে এসেছেন রতন টাটা। প্রায় দেড় দশক আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনদর্শন মেলে ধরেন তিনি। দুর্নীতিমুক্ত থাকার কারণও খোলসা করার পাশাপাশি, নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। (Ratan Tata Demise)


রতন টাটা জানিয়েছিলেন, একবার এক ধনকুবের শিল্পপতির সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর। একটি চুক্তি নিয়ে তাঁকে শলা-পরামর্শ দিচ্ছিলেন ওই শিল্পপতি। চুক্তিতে সিলমোহর পেতে হলে জনৈক মন্ত্রীকে ১৫ কোটি টাকা দেওয়ার সুপারিশও করেন ওই শিল্পপতি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন রতন টাটা। 


এতে অবাক হয়ে যান ওই শিল্পপতি। দুর্নীতি কী করে এড়িয়ে চলেন, নিজে থেকেই জানতে চান ওই শিল্পপতি। তাঁকে রতন টাটা বলেন, "গোটাটাই আত্মসংযমের ব্যাপার। আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।" শুধুমাত্র জবাব দেওয়ার খাতিরেই যে তিনি ওই মন্তব্য করেননি, তা নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে গিয়েছেন রতন টাটা। তাঁর বক্তব্য ছিল, "কোনও ভাবে (দুর্নীতিতে) যুক্ত হইনি, এই অনুভূতি বুকে নিয়ে রাতে ঘুমাতে চাই আমি।"


বুধবার মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রতন টাটা। বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েক দিন আগেই সেখানে ভর্তি হন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় সেখান থেকেই। রতন টাটার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে।  শিল্প, রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই শোকপ্রকাশ করেছেন তাঁর মৃত্যুতে। 


রতন টাটার জীবনদর্শনও বরাবরই ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। তাই রাজনীতিতে নাম লেখাতে হয়নি কখনও। দরজায় দরজা গিয়ে ভোট চাইতে হয়নি। বরং নিজে থেকেই তাঁকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকার করে নেন সাধারণ মানুষ। তাঁর জীবন-যাপন, চিন্তা-ভাবনাই সমীহ আদায় করে নেয়। ক্ষমতা এবং সম্পদের বলে বলীয়ান হওয়া কখনও লক্ষ্য ছিল না বলে সোজাসাপটা জানিয়ে দেন। 


রতন টাটার বক্তব্য ছিল, "লোহাকে কেউ ধ্বংস করতে পারে না, কিন্তু নিজে মরচে ধরে নষ্ট হয়ে যায়। একই ভাবে অন্য কেউ নন, ব্যক্তি বিশেষকে ধ্বংস করতে পারে তাঁর মানসিকতা।" অন্যকে হিংসা করা তো দূর, বরং নিজের চেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে সমাদরের পক্ষে ছিলেন তিনি। নিজের চেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের যিনি সমাদর করেন, তাঁরাই প্রকৃত নেতা বলেও মন্তব্য করেন।