নয়াদিল্লি: আর জি কর কাণ্ডে তোলপাড় গোটা দেশ। সেই নিয়ে শুনানি চলাকালীন ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করল সুপ্রিম কোর্ট। কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, সেই নিয়ে নিজেদের মতামত জানাবে ওই টাস্ক ফোর্স। একাধিক চিকিৎসক রয়েছেন ওই টাস্ক ফোর্সে। (RG Kar Case Hearing)


কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার সেই নিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়, তাতেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। (Supreme Court)


সুপ্রিম কোর্টের ওই টাস্ক ফোর্সে নেতৃত্ব দেবেন ভারতীয় নৌবাহিনীর চিকিৎসা পরিষেবা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল, অ্যাডমিরাল আরতি সরিন। এ ছাড়াও টাস্ক ফোর্সে রয়েছেন প্রখ্যাত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডি নাগেশ্বর রেড্ডি, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস়-এর ডিরেক্টর এম শ্রীনিবাস, বেঙ্গালুরুর NIMHANS-এর প্রতিমা মূর্তি, জোধপুর AIIMS-এর গোবর্ধন দত্ত পুরি, দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের এস রাওয়ত, এশিয়া পেসিফিক পিডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি-ক উপাচার্য তথা অধ্য়াপিকা অনিতা সাক্সেনা,  জেজে গ্রুপ হাসপাতালের পল্লবী সাপলে এবং গুরুগ্রামের পারস হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন পদ্মা শ্রীবাস্তব।


আরও পড়ুন: RG Kar Case: আরজি করে চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন, হাইকোর্ট থেকে মামলা গেল সুপ্রিম কোর্টে


শুনানি চলাকালীন এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ওই টাস্ক ফোর্স নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাবেন, কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে, তার সুপারিশ করবেন, যা গোটা দেশে কার্যকর করা হবে। টাইমলাইন ধরে, কোথায় কী করা যেতে পারে, তাও জানাতে পারে টাস্ক ফোর্স। প্রধান বিচারপতি বলেন, "গোটা দেশের চিকিৎসকদের জানাতে চাই, আপনাদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্যই আমরা রয়েছি, এই মুহূর্তে যাকে ঘিরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।"


আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিতে হবে ওই টাস্ক ফোর্সকে। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে আগামী দুই মাসের মধ্যে। সেই মতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত হাসপাতালকে পদক্ষেপ করতে হবে। কত সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নিযুক্ত করতে হবে, প্রবেশপথে ব্যাগেজ স্ক্রিনিং, চিকিৎসকদের বিশ্রামের ঘর, হাসপাতাল জুড়ে সিসিটিভি, রোগীদের অনুযোগ সামাল দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ, হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ পোস্ট এবং যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে টাস্ক ফোর্সের নির্দেশানুসারে চলতে হবে হাসপাতালগুলিকে। সেই মতো এক মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে হলফনামা জমা দিতে হেব আদালতে।


সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দিকটি বার বার আলোচনায় উঠে এলেও, আজ পর্যন্ত রাজ্য বা জাতীয় স্তর থেকে তেমন কোনও পদক্ষেপই চোখে পড়েনি। সুপ্রিম কোর্টেও আজ বিষয়টি ওঠে। প্রধান বিচারপতিকে জানানো হয়, চিকিৎসকদের বিশ্রামের জায়গা নেই, ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতাটুকু বজায় রাখা হয় না।  একটি মাত্র শৌচাগার মেলে হাসপাতালে। সেই শৌচাগারে যেতেও অনেকটা দূর হেঁটে যেতে হয়। অবাধ্য রোগীদের সামলাতে হয় চিকিৎসকদের।  চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। এমনকি চিকিৎকদের হিংসার শিকার হতে হয়, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মহিলা চিকিৎসকদের বিশেষ করে হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে মেনে নেন প্রধান বিচারপতিও। তাই তিনি বলেন, "আর একটা ধর্ষণ এবং খুনের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না দেশ। এখনই পদক্ষেপ করতে হবে।" আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে, সেই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মতও জানতে চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এদিন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল।