মুম্বই: দীর্ঘ একমাস জেলে থাকার পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন রিয়া চক্রবর্তী। বুধবার, মাদক মামলায় অভিনেত্রীকে জামিন দেয় বম্ব হাইকোর্ট। এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডের বিনিময়ে রিয়াকে জামিন প্রদান করেন বিচারপতি।


আদালতের নির্দেশ, নির্দিষ্ট সময়ে থানায় হাজিরা। জমা রাখতে হবে অভিনেত্রীর পাসপোর্ট। আদালতের নির্দেশ ও তদন্তকারী অফিসারকে না জানিয়ে রিয়াকে গ্রেটার মুম্বই না ছাড়ার নির্দেশ বম্বে হাইকোর্টের।


এই মামলায় মোট ৫ অভিযুক্তের মধ্যে জামিন পেলেন ৩ জন। রিয়া ছাড়া জামিন পেলেন সুশান্তের হাউস ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা ও পরিচারক দীপেশ সাওয়ান্ত।  তবে, রিয়ার ভাই সৌভিক চক্রবর্তী সহ ২ জনের জামিন নাকচ করে দেয় আদালত।


গতকালই রিয়ার জেল হেফাজতের মেয়াদ ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছিল বিশেষ আদালত। রিয়ার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ এনসিবি-র। গত ৮ সেপ্টেম্বর সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সঙ্গে মাদক-যোগের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। মুম্বইয়ের বাইকুল্লা জেলে পাঠানো হয় অভিনেত্রীকে।


এর আগে, বম্বে হাইকোর্টে করা ৪৭ পাতার জামিনের আবেদনপত্রের রিয়া দাবি করেন, সুশান্ত একাই গাঁজা খেতেন। স্যামুয়েল মিরান্ডা আর দীপেশ সাওয়ন্ত-কে দিয়ে গাঁজা আনাতেন। সুশান্তের রাঁধুনি নীরজ সিবিআই ও মুম্বই পুলিশকে জানান, মৃত্যুর ৩ দিন আগে গাঁজার জয়েন্ট বানাতে বলেন সুশান্ত। তাঁর কথা মতো, জয়েন্ট বানিয়ে তিনি একটি বাক্সে ভরে রেখে দেন সুশান্তের ঘরে। মৃত্যুর পর বাক্সটি খালি অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ গাঁজার সবকটি জয়েন্ট শেষ! এতেই প্রমাণ হয় যে সুশান্ত একাই গাঁজা খেতেন। তার জন্য সহযোগীদের ব্যবহার করতেন।


জামিনের আর্জিতে রিয়া চক্রবর্তীর আরও দাবি, অভিযোগ উঠেছে আমি সুশান্তের জন্য কখনও কখনও মাদক আনাতাম। তার দামও মেটাতাম! এই মামলায় আমার ভূমিকা শুধু এটুকুই। অর্থাৎ সুশান্তের জন্য স্বল্প পরিমাণ মাদক আনাতাম - এটা প্রমাণ হলে খুব বেশি হলে ১ বছরের সাজা হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষিতে যে অভিযোগ উঠেছে তার ভিত্তিতে আমাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে। যদি আজ সুশান্ত বেঁচে থাকত, তাহলে ওর বিরুদ্ধেও স্বল্প মাত্রায় মাদক নেওয়ার অভিযোগ উঠত। সে অভিযোগ প্রমাণ হলে ১ বছরের সাজার সংস্থার আছে। তাতে জামিনও পাওয়া যায়। তবে মাদক যিনি নিচ্ছেন, তাঁর ১ বছরের সাজা হচ্ছে আর যিনি মাদক কিনতে টাকা দিয়েছেন - তাঁর ২০ বছরের সাজার কথা বলা হচ্ছে - এটা ন্যায়সঙ্গত নয়।


জামিনের আবেদনের নথিতে রিয়া এও দাবি করেন, সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পর জানতে পারি, ওর গাঁজা খাওয়ার অভ্যেস আছে। যাঁরা ঘরে কাজ করতেন, তাঁদেরই গাঁজা জোগাড় করতে বলতেন সুশান্ত। ওর এই অভ্যেস নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। সুশান্তের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, ২০১৫-১৬ তে কেদারনাথের শ্যুটিংয়ের সময় থেকে ও গাঁজা উপভোগ করতে শুরু করে। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম।


রিয়ার আরও দাবি, গত ৮ জুন, সকাল থেকে সুশান্ত নিজের ফোনে ব্যস্ত ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করতে ও একটা মেসেজ দেখায়। সেটা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। দেখি, ওর বোন প্রিয়ঙ্কা ওষুধের তালিকা পাঠিয়েছে। আমি সুশান্ত-কে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে বলি। বোঝাই যে, গাঁজা খাওয়ার অভ্যেস আছে, তার মধ্যে এসব ওষুধ খেলে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু সুশান্ত কোনও কথা কানে তোলেনি। বোনের পাঠানো ওষুধই খাবে বলে জেদ ধরে। এরপরই ও আমাকে সব জিনিসপত্র নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলে।