মস্কো: আজকের দিনে সন্তানধারণে অনীহা তৈরি হয়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। পশ্চিমি দেশগুলিতেই নয় শুধু, এশিয়ার একাধিক দেশেও বিয়ে, সংসার, সন্তানধারণের প্রতি অনীহা জন্মেছে সাধারণ মানুষের। সেই আবহেই সন্তান না ধারণ করার সিদ্ধান্তকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চলেছে রাশিয়া। নিঃসন্তান থাকার ভাবনা পশ্চিমি সংস্কৃতির অংশ বলে দাবি তাদের। মঙ্গলবার রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষে এই মর্মে চূড়ান্ত বিল পাস হয়েছে। নিঃসন্তান থাকার সিদ্ধান্তকে 'পশ্চিমি প্রোপাগান্ডা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই মতো সর্বসম্মতিতে সন্তানের জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে 'বেআইনি', 'নিষিদ্ধ' বলে ভোটাভুটি হয়েছে। এর ফলে দেশের জন্মহারে উন্নতি ঘটবে বলে আশাবাদী দেশের আইনপ্রণেতারা। (Russia Bans Childless Lifestyle)
এবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গর্ভপাত আইন নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হয়। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে গর্ভপাত নিষিদ্ধ রয়েছে। রিপাবলিকানদের একটা বড় অংশ গর্ভপাতকে সার্বিক ভাবে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দেশের মহিলারা। মেয়েদের শরীর, মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর সরকারির খবরদারির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই আবহেই রাশিয়ায় সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর খাঁড়া নামতে চলেছে। (Childless Lifestyle)
যদিও দেশের জনসংখ্যায় ভারসাম্য রাখতেই মস্কো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এবছর সেপ্টেম্বরে যে পরিসংখ্যান সামনে আসে, তাতে রাশিয়ার জন্মহার গত ২৫ বছরের তুলনায় একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আবার ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মৃত্যুহার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে একধাক্কায়।
দেশের এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য 'সর্বনাশা' বলে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাই জনসংখ্যায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। মহিলাদের অন্তত পক্ষে তিনটি করে সন্তান নেতে উৎসাহিত করছেন তিনি। এমনকি একের বেশি সন্তানধারণে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধারও ঘোষণা করেছেন পুতিন।
সন্তানের জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রাশিয়া জানিয়েছে, সন্তান না নেওয়ার পক্ষে অনলাইনে কোনও রকম লেখা পোস্ট করা যাবে না। এমন কোনও বিজ্ঞাপন বা ছবি তৈরি করা যাবে না, যাতে সন্তানধারণে অনীহার দেখানো হয়। এই ধরনের লেখালেখি, ছবি এবং বিজ্ঞাপন, যেখানে সচেতন ভাবে কেউ সন্তানধারণে অনীহা প্রকাশ করছেন, তা 'ধ্বংসাত্মক' বলে জানিয়েছে রুশ সরকার। নিম্নকক্ষে যে বিল পাস হয়েছে, এবার তা উচ্চকক্ষে পাস হওয়ার অপেক্ষা। পুতিন সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে।
নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর এমন হস্তক্ষেপ নিয়ে যদিও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় রুশ সরকার। যে বা যারা সন্তান না নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করবেন, তাঁদের মোটা টাকা জরিমানা করার কথাও বলা হয়েছে। নাগরিকদের জন্য জরিমানার অঙ্ক ৪১০০ ডলার, পদাধিকারীদের জন্য ৫১০০০ ডলার পর্যন্ত।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছ'মাসে রাশিয়ায় ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬০০ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৬০০০ কম। ১৯৯৯ সালের নিরিখে সর্বনিম্ন। সেই নিরিখে মৃত্যু বেড়েছে ৪৯০০০, প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা CIA জানিয়েছে, ২০২৩ সালে জন্মহারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে রাশিয়া ছিল অন্যতম।
শুধু তাই নয়, সন্তান জন্ম দেওয়ায় মহিলাদের উৎসাহিত করতে 'Ministry of Sex' চালুর পরিকল্পনাও নিয়েছে রাশিয়া। এর আওতায় রাত ১০টার থেকে ২টো পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে ওই সময়ে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হতে পারেন যুগলরা। বাচ্চা মানুষ করতে গিয়ে চাকরি করা হয় না মহিলাদের। তাঁদের বাড়ির কাজ এবং সন্তান পালনের জন্য টাকা দেওয়ার পাশাপাশি, পেনশনের ব্যবস্থাও করা হতে পারে। প্রেম করার জন্যও নাগরিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে রাশিয়ায়। আলাপচারিতা এবং বোঝাপড়া তৈরি হওয়ার জন্য প্রথম তিনবার দেখা-সাক্ষাতের খরচ হিসেবেও টাকা দেওয়া হবে, প্রায় ৫০০০ টাকা করে।
বিয়ের পর হোটেলে যাতে নতুন জীবন উপভোগ করতে পারেন নববিবাহিতরা, তার জন্যও টাকা দেওয়ার ভাবনা রয়েছে, প্রায় ২৩ হাজার টাকার মতো।
খবারোভস্কে ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সি মেয়ে, যাঁদের শিক্ষা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রায় ১ লক্ষ টাকা পেতে পারেন। প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মিলবে প্রায় ৯ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। অফিসে কাজের ফাঁকেও নাগরিকদের প্রজননে উৎসাহিত করেছেন খবারোভস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েভগনি শেস্তোপালোভ। পাশাপাশি, ফর্ম বিতরণও শুরু হয়েছে, যেখানে যৌনতা, ঋতুস্রাব সংক্রান্ত তথ্য লিখতে হবে মহিলাদের। কেউ যদি উত্তর জানাতে না চান, তাঁকে পাঠানো হবে চিকিৎসকের কাছে।