ঢাকা: আমেরিকায় থাকার দরুণ দেশের রাজনীতিতে সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না এতদিন। কিন্তু এবার বাংলাদেশে ফিরতে পারেন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শুধু দেশে ফেরাই নয়, আগামী দিনে আওয়ামি লিগ-কে নেতৃত্বও দিতে পারেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে নিজেই সেকথা জানালেন হাসিনা-পুত্র। (Sajeeb Wazed Joy)


সজীবন জানিয়েছেন, নির্বাসনে দীর্ঘদিন থাকতে নারাজ হাসিনা। তিনিও বাংলাদেশে ফিরতে চাইছেন। সজীবের দাবি, গত দু'দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকার পরই অবসর নিতে চেয়েছিলেন হাসিনা। তাহলে এবার কি হাসিনা অবসর নেবেন রাজনীতি থেকে? সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন সজীব। বরং হাসিনা ফের রাজনীতিতে ফিরতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। (Sheikh Hasina)


একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব বলেন, "মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত কোনও পরিকল্পনাই নেই ওঁর। আপাতত যেখানে রয়েছেন, সেখানেই থাকতে চাইছেন। ভিসা বা অন্যদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন বলে যা চাউর হচ্ছে, তা আসলে গুজব। কোনও সত্যতা নেই। উনি শেষ মেশ বাংলাদেশেই ফিরতে চান। রাজনীতিতে থাকবেন, না কি অবসর নেবেন, সেটা পরের কথা।" (Bangladesh Situation)


সজীব জানিয়েছেন, বাংলাদেশেই বড় হয়েছেন হাসিনা। এবারই শেষ বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। বয়স ৭৬ হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতেই অবসরযাপন করতে চান হাসিনা। সজীবের দাবি, গ্রামের বাড়িতে অবসরযাপনই হাসিনরা স্বপ্ন। বাংলাদেশের বাইরে নির্বাসনে জীবন কাটাতে চান না তিনি। নিজের জন্য হাসিনা রাজনীতিতে আসেননি বলেও জানান সজীব।


তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবসায়ী সজীব আমেরিকার বাসিন্দা। সাম্প্রতিক হিংসার সময় বাংলাদেশে ছিলেন না তিনি।  হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়া নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন তিনি। হাসিনার পরিবার-পরিজন যে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সেই দেশ হাসিনাকে কীভাবে বের করে দিল প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, "দেশের জন্যই রাজনীতিতে আসতে হয়েছিল, ক্ষমতার লোভে নয়। দু'বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই অবসর নিতে চেয়েছিলেন হাসিনা। আমাকে রাজনীতিতে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। আমাদের পরিবারের কারও ক্ষমতার লোভ নেই।"


বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনিই এখন আওয়ামি লিগের প্রধান বলে মন্তব্য করেন সজীব। তাঁর বক্তব্য, "স্বাভাবিক বাবে আমিই এখন আওয়ামি লিগের মুখ হয়ে গিয়েছি। আমি এটা চাইনি। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই আমার। কিন্তু দলের নেতাদের উপর হামলা চলছে, তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জানার পরই বুঝতে পারি, ওঁদের এভাবে একা ছেড়ে দিতে পারি না। তাই দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের প্রায় সব মন্ত্রীদেরই ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই যা করার করব আমি। এখনও আওয়ামি লিগের লক্ষ লক্ষ অনুগামী রয়েছেন। রাতারাতি সব শেষ হয়ে যাবে না।"


শেষ পর্যন্ত দলের কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানালেও, সজীবের দাবি, "আওয়ামি লিগের কর্মীরা যদি চান আমি আসি, আমাকেও ভাবতে হবে। দলের সদস্যদের উপরই সব কিছু নির্ভর করছে। দল মা-কে চাইলে, উনিই নেতা থাকবেন। আমাদের গণতান্ত্রিক দল। দলের সদস্যদের উপরই নির্ভর করছেন কে দলকে নেতবত্ব দেবেন।" নির্বাচন এলে আওয়ামি লিগ জিতবেই, আর জিতলেও বিরোধী শিবিরে থাকবে, যে কোনও একটা কিছু হলেই হবে বলে মন্তব্য করেন সজীব।


আপাতত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী মুহম্মদ ইউনূস। কিন্তু সজীবের দাবি, মানুষ তাঁকে নির্বাচিত করেননি। সংবিধান অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করাতে হবে। তিনি বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি। বিদেশি শক্তি এবং অল্প সংখ্যক মানুষ তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের জনাদেশে সরকার গড়ে ওঠেনি। মানুষের রায় ছাড়া দেশ পুনর্গঠনের কথা ভাবছে ওরা, যা অসাংবিধানিক। এটা অসাংবিধানিক সরকার। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করাতে হবে।"


গত সোমবার হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানায় সেনা। কিন্তু সজীবের দাবি, তাঁর মা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেনইনি। তাঁর বক্তব্য, "অনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেননি মা। সেই সময়ই পাননি। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগোতে শুরু করে। হাতে সময় না থাকায় ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি মা। সংবিধান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত তিনিই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।"


হাসিনার বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে সজীব আরও বলেন, "গতবার সেনা অভ্যুত্থানের সময় আমার মাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মামলা দায়ের করা হলেও, পরে বেকসুর খালাস পান উনি। আমার মা কাউকে ভয় পান না। ওঁরা যে খেলা খেলতে চাইছে, আমরা তার জন্য প্রস্তুত। শেখ হাসিনাকে ফের কোর্টে তোলা হোক, দেখা যাক কী হয়। আমার মা বেআইনি কিছু করেননি। কোনও অন্যায় করেননি উনি। আমাদের সরকারের কেউ যদি আইন বহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ করা উচিত। আমার মাকে দোষ দেওয়া যায় না।" সজীব জানিয়েছেন, রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য অন্য দেশের কাছে আবেদন জানাননি হাসিনা। নিজের দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। বাংলাদেশে শীঘ্রই ফিরবেন হাসিনা।


আরও পড়ুন: Brazil Plane Crash: গোল গোল ঘুরতে ঘুরতে সোজা মাটিতে, বসতি এলাকায় ভেঙে পড়ল বিমান, হত ৬২