নয়াদিল্লি: লকডাউনে কাজ হারিয়ে ঘরের পথে পা বাড়ানো পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। আর কতদিন তাঁদের ঘরের ফেরার অপেক্ষায় থাকতে হবে, কে তাঁদের বাড়ি ফেরার খরচ বহন করবে, খাবার, আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করবে, তার পয়সা দেবে, জানতে চাইল শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। কেন্দ্রের তরফে বেঞ্চের সামনে হাজির সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কাছে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনভাড়া দেওয়া নিয়ে টানাপড়েন, বিভ্রান্তির ব্যাপারে জানতে চান তিন বিচারপতি অশোক ভূষণ, এস কে কাউল ও এম আর শাহ।
ট্রেন বা বাস, যেভাবেই হোক, ঘরে ফেরার ভাড়া শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না, তাদের খাবার, জলের ব্যবস্থা সরকার, প্রশাসনকে করতে হবে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ। বলেছে, নানা জায়গায় আটকে পড়া শ্রমিকদের খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসনকে। ফেরার বাস বা ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা পর্যন্ত সেটা তাঁদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে।
কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়, গত ১ মে থেকে ৯৭ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে নিজের ঘরে ফেরানো হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে চালু লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে শুনানিতে তিনি বলেন, এ এক অভূতপূর্ব সঙ্কট, আমরাও সেইমতো ব্যবস্থা নিচ্ছি, যা ভাবা যেত না। বিচারপতি ভূষণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নিজেদের রাজ্যে ফিরতে ইচ্ছুক আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাধা দিয়ে থামিয়ে দেওয়া উচিত নয় বলে জানিয়েছে। বলেছে, কোনও পরিযায়ী শ্রমিক যদি কোনও রাজ্যে যেতে চান, তারা বলতে পারে না, তোমায় নেব না। বিচারপতি ভূষণ আরও বলেন, নিজের রাজ্যে ফিরতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের ঘরে পাঠানোর একটা সময়সীমা স্থির করা উচিত সরকারের। তার মাঝের সময়টায় ওদের খাবারদাবার ও অন্য সব পরিষেবারও ব্যবস্থা করতে হবে। মেহতা জানান, ৫০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ১ থেকে ২৭ মে-র মধ্য়ে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে, আরও ৪১ লক্ষকে বাসে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল আরও বলেন, সব আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বিস্তারিত তথ্য তখনই পাওয়া যাবে, যখন রাজ্যগুলি সেসব দেবে। যাদের ফেরানো হয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশের বেশি বিহার, উত্তরপ্রদেশের।
আদালত বলেছে, তারা বাড়ি ফিরতে উন্মুখ শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে বিচলিত, উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার, কেন্দ্রশাসিত এলাকার প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে, সন্দেহ নেই, কিন্তু শ্রমিকদের নথিভুক্তিকরণ, নিজেদের রাজ্যে পাঠানো, জল, খাবারের বন্দোবস্ত করায় ঘাটতি রয়েছে।
মঙ্গলবারই কেন্দ্র, রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিস জারি করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা মোকাবিলায় তাদের তরফে কিছু ত্রুটি, গলদ, খামতি রয়ে গিয়েছে। মিডিয়ায় বেরনো রিপোর্টেই পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে দীর্ঘ রাস্তা পেরনো দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্ভাগ্যজনক, চরম কষ্টের ছবি ফুটে উঠেছে।