ওয়াশিংটন: জলের কলসি ছুঁয়ে ফেলায় একরত্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার নিদর্শন রয়েছে এই দেশে। দলিত মেয়েদের শিবপুজোর উপর রয়েছে উচ্চবর্ণের চোখরাঙানি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর দেশ জুড়ে অমৃতকাল পালিত হলেও, জাতপাত নিয়ে বৈষম্য, বিদ্বেষ আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত (Caste Discrimination)। কিন্তু দেশের অন্দরে না হলেও, বিদেশের মাটিতে ইতিহাস রচনা করলেন এক ভারতীয়ই। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকাকে প্রথম জাতপাতমুক্ত শহর উপহার দিলেন তিনি, অন্তত খাতায়কলমে তো বটেই (Ban on Caste Discrimination)।
জাতপাত নিয়ে বৈষম্য, বিদ্বেষ আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারত
আমেরিকার সিয়াটল শহরে জাতপাতের নিরিখে ভেদাভেদ তথা বৈষম্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক তথা অর্থনীতিবিদ ক্ষমা সবন্ত, যিনি নিজে কিনা জন্মসূত্রে উচ্চবর্ণের হিন্দু, এই প্রস্তাব এনেছিলেন। ক্ষমার সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর ফলে জাতপাতের ভেদাভেদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হল সিয়াটলে, আমেরিকায় যা এই প্রথম (Seattle Bans Caste Discrimination)।
সিয়াটল নগর নিগমে ক্ষমার আনা ওই প্রস্তাবটি আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়। ৬-১ ভোটে সেটি পাস হয়েছে সেখানে। ক্ষমা নিজেও নগর নিগমের সদস্য। তাঁর বক্তব্য, “আনুষ্ঠানিকতা মিটল। আমাদের লড়াই ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছে। জাতপাতের বৈষম্য নিষিদ্ধ, এমন প্রথম শহর পেল আমেরিকা। দেশের অন্যত্রও এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।”
আরও পড়ুন: Elon Musk: ৩ লক্ষ কোটি খসিয়েও লাভের দেখা নেই! হঠাৎ অনুতাপের সুর মাস্কের গলায়
ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য প্রমীলা জয়পালও এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্বের কোনও সমাজেই জাতপাতের নিরিখে বৈষম্যের কোনও জায়গা নেই। আমেরিকাতে তো নেই-ই। যে কারণে বেশ কিছু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও জাতপাত নিষিদ্ধ হয়েছে। জাতপাতের বৈষম্যের বিরুদ্ধে, নিজেদের অধিকারের দাবিতে নিত্যদিন লড়াই করে চলেছেন খেটে খাওয়া মানুষজন।”
আমেরিকায় জাতপাতমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইক্যুয়ালিটি ল্যাবস সংগঠন। সিয়াটলে সাফল্য পেয়ে তাদের বক্তব্য, “ঘৃণার ঊর্ধ্বে ভালবাসার জয়। আমেরিকায় জাতপাতের নিরিখে বৈষম্য় নিষিদ্ধ করা প্রথম শহর সিয়াটল। এই জয় পেতে গিয়ে ধর্ষণেকর হুমকি শুনতে হয়এছে আমাদের। ভুয়ো খবর এমনকি ধর্মান্ধতাও ছড়ানে হয়েছে। ”
সিয়াটল নগর নিগমের সিলমোহর জাতপাত নিষিদ্ধ করায়
প্রায় ২০০ সংগঠনকে এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিল ইক্যুয়ালিটি ল্যাবস। যদিও এই আন্দোলনের বিরোধী হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন। এমনকি জাতপাত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে প্রচারও চালিয়েছে তারা। তাদের যুক্তি, জাতপাতের বৈষম্য নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আসলে দক্ষিণ এশীয়দের আরও বেশি করে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। এতে হিন্দুত্ব বিরোধী ভাবনা আরও জোর পাবে বলেও মত একাংশের।