নয়াদিল্লি: দেশের নাম শুধু ভারত রাখার দাবি থেকে, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকরের পক্ষে সওয়াল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তপ্ত জাতীয় রাজনীতি। সেই আবহেই এবার বিজেপি-র বিরুদ্ধে দেশের সংবিধানে কাটছাঁট করার অভিযোগ। নতুন সংসদভবনে সাংসদদের হাতে সংবিধানের যে প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে, তার মুখবন্ধ থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' এবং 'সমাজতন্ত্র' শব্দদু'টি বাদ দেওয়া হয়েছে (Constitution Preamble)। সেই নিয়ে চরমে রাজনৈতিক তরজা। চালাকি করে সংবিধানে এই রদবদল ঘটানো হয়েছে বলে একদিকে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। অন্য দিকে, বিজেপি-র (BJP) দাবি, দেশের আসল সংবিধানে ওই দুই শব্দ ছিলই না। সেই আসল সংবিধানের প্রতিলিপিই তুলে দেওয়া হয়েছে সকলের হাতে। (Constitution of India)


লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীই প্রথম বিষয়টি গোচরে আনেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এ  বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন অধীর। বলেন, "নতুন সংসদভবনে যে সংবিধান হাতে প্রবেশ করি আমরা, তার মুখবন্ধে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দদু’টি ছিল না। সংবিধানে ওই দু'টি শব্দ না থাকলে, অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।" প্রথমে সেই নিয়ে নীরবতা পালন করলেও, বিতর্কের জেরে শেষ মেশ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে কেন্দ্র।


বিজেপি নেতা তথা সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর বক্তব্য, “প্রথম যখন তৈরি হয়, এমনই ছিল দেশের সংবিধান। ৪২তম সংশোধনের পর তা বদলে যায়। আসল সংবিধানের প্রতিলিপি এখনও রয়েছে।” যদিও ৪২তম সংশোধনটি বাদ রেখে বাকি যতবার সংবিধানে সংশোধন ঘটানো হয়েছে, তার সবক’টিই রাখা হয়েছে কেন্দ্রের বিলি করা ‘নতুন’ সংবিধানে।


আরও পড়ুন: Women's Reservation Bill: ২০৩৯ সালের আগে সম্ভব নয় মহিলাদের সংরক্ষণ! ২০২৪-এর জন্যই বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো, দাবি বিরোধীদের


কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের গলাতেও একই সুর শোনা যায়। তিনি বলেন, “দেশের সংবিধানের খসড়া এমনই ছিল। পরে তাতে সংশোধন ঘটানো হয়। এটাই আসল সংবিধান।” এ নিয়ে অধীর বলেন, "১৯৭৬ সালে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ দু’টি সংবিধানে যোগ করা হয় জানি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। পরিষ্কার করে কিছু বলা হচ্ছে না।”


বুধবার লোকসভাতেও বিষয়টি উত্থাপন করেন অধীর। সরকারি ভাবে যত বার সংশোধিত হয়েছে সংবিধান, সেই রূপেই তা থাকা উচিত। রাজ্যসভার সাংসদ তথা CPI নেতা বিনয় বিশ্বমের মতে, এভাবে সংবিধানে কাটছাঁট করা 'অপরাধ'। ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “বিজেপি যদি সংবিধানের মুখবন্ধের সাংবিধানিক সংশোধনকে সম্মান না করে, আসল সংবিধানকেই মেনে চলে, তাহলে গণতন্ত্রের মন্দির, পুরনো সংসদভবন ছেড়ে দিল কেন? দেশের প্রকৃত সংসদভবনে কেন রইল না? ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দদু’টিকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিজেপি-র পক্ষপাতমূলক আচরণেরই প্রতিফলন। মানুষকে বোকা বানানো বন্ধ করুন। ওরা কী চাইছে তা বোঝার ক্ষমতা রয়েছে সকলের।”


তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন বলেন, "আমাকে যে সংবিধান দিয়েছে, তাতে আমার নামও লেখা রয়েছে। দেখুন কী আছে, 'উই দ্য পিপল অফ ইন্ডিয়া, হ্যাভিং সোলেমলি রিসলভড টু কনস্টিটিউট ইন্ডিয়া ইন টু এ সভরেন, ডেমোক্রাটিক রিপাবলিক'। 'সোশালিস্ট' আর 'সেক্যুলার 'গায়েব? মোদিজি ৩০০ সিট পেয়েছেন বলে যা ইচ্ছে তা-ই করবেন!"


সামনেই ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচন। এই প্রেক্ষাপটে, বিজেপি-র বিরুদ্ধে দেশের সংবিধানকে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। সাংসদদের দেওয়া সংবিধানের প্রতিলিপির প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দদু’টির বাদ যাওয়া দিয়েই তার সূচনা ঘটল বলে অভিযোগ তাঁদের।