কলকাতা: বাংলায় তৃণমূলের উত্থ্বানের পৃষ্ঠভূমি নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর।আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই আঁতুরঘরেই আগুন!দুই জায়গার বিধায়কের গলাতেই কার্যত বিদ্রোহের সুর! খোঁচা!একদিকে রাজ্যের দাপুটে নেতা ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী!অন্যদিকে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।


শুক্রবার নন্দীগ্রাম দিবসে নন্দীগ্রামের মাটি থেকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম কারিগর শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু বলেছেন, নন্দীগ্রামের আন্দোলন কারও একার নয়।

আর একা শুভেন্দুই নন। তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য,আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা,কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী,ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত-ভোট যতো এগিয়ে আসছে, দলবদলের সুর জোরাল হচ্ছে একের পর এক তৃণমূল বিধায়কের গলায়।

সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন, দরকারে অন্য দলে যোগ দিতে পারি।

কোচবিহার দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেছেন, দলে গুরুত্ব নেই। তাই এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি, অন্য দলে যাব কিনা শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে আলোচনা করব। দলে ফিরব কিনা সিদ্ধান্ত নিইনি।

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে ১২টি আসন খোওয়ানোর পর ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব দেয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তা নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক।

আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক  কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার গলাতেও অসন্তোষের সুর।

শীলভদ্র দত্ত  বলেছেন, বাইরে থেকে রাজনীতি করা লোক, এবার বাইরে থেকে এসে যেসব জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, আমার বিধানসভা কেন্দ্রে আমার লোকের থেকে যা জানতে চাইছেন, তাতে সম্মানহানি হচ্ছে, ২০-২২ বছরে এসে যে একদিনের জন্য রাজনীতি করেনি, সে আমায় জ্ঞান দেবে মানতে পারছি না।

এই পরিস্থিতিতে জল্পনা তুঙ্গে, তাহলে কি বিধানসভা ভোটের আগে বড়সড় ভাঙন ধরতে পারে তৃণমূলে? তেমন দাবির ইঙ্গিতই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় গলায়।

অন্য দল ভাঙানোর ফল হাতেনাতে টের পেতে হচ্ছে তৃণমূলকে। কটাক্ষ বামেদের। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী বলেছেন, ডুবন্ত জাহাজ, ইঁদুর পালাচ্ছে, এটাই দক্ষিণপন্থীদের ভবিষ্যৎ।

শুভেন্দুর ভবিষ্যত রাজনৈতিক পদক্ষেপ যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা বুঝেই এ নিয়ে বেশিকিছু বলতে নারাজ তৃণমূল।

শুভেন্দু বলেছেন, রাজনীতি করতে গিয়ে কোথায় হোঁচট খাচ্ছি, কোথায় আমার পথ গর্তে ভরা, কোথায় স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব হচ্ছে সব বলব। তবে আজ নয়।

তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, এসব রূপক বিবৃতি... সাহিত্যে চলে... রাজনীতিতে স্পষ্টতা প্রয়োজন।

শুভেন্দুর পদক্ষেপ নিয়ে সতর্ক বিজেপিও। এখনই কিছু মন্তব্য করেননি বিজেপি নেতারা।

একসময়ে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস শিবিরে ভাঙন ধরানোর নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন শুভেন্দু। এখন সেই শুভেন্দুকে ঘিরে টানাপোড়েনের মাঝে কটাক্ষের সুর তাদের গলায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, তৃণমূলের অন্তর্বিরোধ এখন ক্যানসার, যার অ্যানসার নেই। মমতা একসময়ে মুর্শিদাবাদে পাঠিয়েছিলেন কেনাবেচা করতে। আজ এই অবস্থা।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে কি তাহলে ঝড় উঠতে চলেছে বাংলার রাজনীতিতে? প্রশ্নটা কিন্তু ক্রমেই জোরাল হচ্ছে।